সিনহা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ওসি প্রদীপ : র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
মেজর(অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান, ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৩ ডিসেম্বর): কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে সংগঠিত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত হিসেবে উল্লেখ করে আজ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে র্যাব। চার্জশীটে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওসি প্রদীপকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে মোট আসামি করা হয়েছে ১৫ জনকে। যার মধ্যে ১৪ জন জেলে এবং পলাতক আছে একজন। পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে চার্জশিটের বিষয় নিয়ে আজ দুপুরে এসব কথা জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ জন ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা এখন পর্যন্ত দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়নি।
এই মামলার আসামীদের মধ্যে ৯ জন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য, তিনজন বরখাস্তকৃত এপিবিএন এর সদস্য ও বাকি তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি যারা মূলত পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত।
মামলায় তদন্তের দায়িত্ব ছিলেন র্যাবের পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম। ৪ মাস ১০ দিন ব্যাপী চলমান এই তদন্তে মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৮৩ জনকে।
এই মামলায় হাত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত ও ডিজিটাল কন্টেন্ট আমলে এনে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশীট প্রদান করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর সিনহা ও তার সঙ্গী ৩ জন ৭ জুলাই প্রকৃতি বিষয়ক ডিজিটাল কন্টেন্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যে নীলিমা রিসোর্টে যান। পরবর্তীতে সেখানে স্থানীয় মানুষদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে মেজর সিনহার এবং এই সূত্রে তিনি জানতে পারেন ওসি প্রদীপ এর নানান অপকর্ম, সে অঞ্চলে মানুষের উপর অত্যাচার ও তার মাদক সম্রাজ্য সম্পর্কে ।
পরবর্তীতে এই ব্যপারে জানতে মেজর সিনহা, রিফাত ও শিপ্রা থানায় ওসি প্রদীপের কাছে যান। এসময় ওসি প্রদীপ তাদের নানান হুমকিধামকি দেন ও সে জায়গা থেকে চলে যেতে বলেন। না গেলে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন। কিন্তু, মেজর সিনহা এই সকল হুমকিকে তোয়াক্কা না করে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ অবস্থায় ওসি প্রদীপ মেজর সিনহাকে তার প্রতিষ্ঠিত মাদক সম্রাজ্যের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে টেকনাফ থানায় বসেই এস আই লিয়াকত, এস আই নন্দদুলাল ও অন্যান্যদের সাথে সিনহাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ জুলাই মেরিন ড্রাইভে গুলি করে হত্যা করা হয় মেজর সিনহাকে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর সর্বমোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। যারমধ্যে, হত্যাকাণ্ডের রাতে পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করে সিনহা, সিফাত, শিপ্রার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে একটি মামলা টেকনাফ থানায় মাদক সংক্রান্ত যা শহীদুল ইসলাম সিফাতকে আসামী করা হয়, পুলিশ ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মেজর সিনহা এবং সিফাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আরেকটি মামলা রামু থানায় মাদক রাখার অভিযোগে শিপ্রা দেবনাথকে আসামী করে দায়ের করা হয়।
মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং মামলার স্বপক্ষে কোন সাক্ষী প্রমাণ না থাকায় তাদের দায়মুক্তি দেয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
চার নম্বর মামলাটি মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড় বোন টেকনাফ আদালতে দায়ের করেন যা র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ র্যাব আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।