পেঁয়াজ দাম কমায় বিপাকে চাষিরা
মেহেদী হাসান || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (৩১ ডিসেম্বর): ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দুদিন পরেই দেশের পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত দুইদিনে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা।
এদিকে, পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে হুট করেই পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের চাষীরা। তারা জানান, আমদানি শুরু হলে আমাদের মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা মনে করছেন পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দাম আরও অনেক কমে যাবে। এ আশঙ্কায় বর্তমানে কৃষকের কাছ থেকে তেমন কেউ পেঁয়াজ কিনছেন না। শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক চাষিরা দু-তিন দিন ধরে পেঁয়াজ আড়তে রেখে দিলেও দেখা মিলছে না কোন ক্রেতার।
মেহেরপুর থেকে পেঁয়াজ বিক্রির জন্যে ঢাকার শ্যামবাজারে এসে পেঁয়াজ চাষি ফজলু মিয়া বিজনেসইনসাইডার’কে জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হয়ে যায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। এই অবস্থায় যদি আমরা পেঁয়াজ ৩৫-৪৫ টাকা বিক্রি করতে না পারি আমাদের অনেক লোকসান হবে। এমনিতেই ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় প্রতি কেজি ১০-১৫ টাকা কমে গেছে।
পেঁয়াজ চাষিরা আরও জানান, অনেক চাষিরাই ঋন নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছে। এই অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দেশের কৃষকরা পাবে না ন্যায্যমূল্য। আর তারা যদি কমদামে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাহলে সামনের বছর আর পেঁয়াজ চাষ করবে না। এতে আসছে বছরও পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই কারণে সরকারের কাছে আবেদন ভরা মৌসুমে ভারত থেকে যাতে পেঁয়াজ আমদানি না করে।
শ্যামবাজারের পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নজরুল চৌধুরী বিজনেসইনসাইডার’কে জানান, দেশে যখন পেঁয়াজ কম থাকে তখন ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর যখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি না থাকে তখন আবার রপ্তানি শুরু করে। ফলে দেশের কৃষকেরা পরে যায় বিপাকে। বেশী দামে বীজ কিনে পেঁয়াজ উৎপাদন করলেও তাদের লোকসানেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
মেহেরপুরের আরেক পেঁয়াজ চাষি সোহাগ মিয়া বিজনেসইনসাইডার’কে জানান, গত বার পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার বেশী দামে বীজ কিনে পেঁয়াজ চাষ করি। কিন্তু পেঁয়াজ মৌসুমের শুরুতেই ভারত থেকে আমদানির ঘোষণা আসায় আমাদের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। আবার পেয়াজ বিক্রির জন্যে ঢাকায় আছি দু/তিন দিন ধরে। খরচ তো বেড়েই চলেছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের যে দাম বলছে তাতে আমাদের লাভ তো দুরের কথা উল্টো খরচটাই উঠবে না।
উল্লেখ্য, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারত। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে বিনা শুল্কে তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মিশর সহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। বর্তমানে ভারতের বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসলে পেঁয়াজ রপ্তানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর সোমবার এক আদেশে বলেছে, সব ধরনের পেঁয়াজের ক্ষেত্রে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।