করোনাভাইরাসের প্রভাবের পরেও
আগামি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ ১০ শতাংশ বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা(০১ জানুয়ারি): মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকার নয়টি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামি অর্থ বছরের (২০২১-২২) বাজেট বরাদ্দ ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এরমধ্যে কোভিট-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, টিকা কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য বলে অর্থমন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে অর্থনৈতিক পতন সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড.এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বিজনেসইনসাইডার’কে বলেন, মহামারী করোনভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক পতনের মধ্যে পরবর্তী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনযোগ্য হবে না। বিশ্বব্যাপী দেশগুলির মধ্যে পণ্যের আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়া বা বন্ধের কারণে কাঁচামালের সঙ্কটে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদন নেই।
তিনি বলেন, বেসরকারী বিনিয়োগ এখন কম, সুতারাং কীভাবে অর্থ বিভাগকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে ধরেছে।
অর্থমন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে মুদ্রাস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির তুলনায ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরেছিলো ৮ দশমিক ২ শতাংশ। পরে মহামারী করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আগামি অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটের ব্যয় প্রায় ৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। যা টাকার অঙ্কে ৫৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজে ধরা হয়েছিলো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা।
এছাড়া আসন্ন বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা এবং এডিপি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির পথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন প্লাটফর্মে হওয়া এই সভায় সিঙ্গাপুর থেকে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এছাড়া সভায় সকল মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সচিবরা অংশ নেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সভায় করোনাভাইরাসের হুমকি মোকাবেলায় এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে কোভিট-১৯ টিকা কর্মসুচিতে বেশি অর্থ বরাদ্দের উপর জোর দেওয়া হয়। এছাড়া করোনাকালে সরকার ঘোষিত প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজে বরাদ্দকৃত তহবিল ব্যবহারের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবেলায় দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সভার নথি অনুযায়ি, আগামী বাজেটে মোট নয়টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাত সমুহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা; কোভিট-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ সফল বাস্তবায়ন; কোভিড -১৯ মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে উদ্দীপনা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ; অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজ কেনায় প্রণোদনা, কৃষি পুর্নবাসন, সারে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা;ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পল্লী উন্নয়ন; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ; গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য গৃহনির্মাণ; নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যে বিনা বা স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু রাখা এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন করা।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপি ধরা হয়েছে ৩৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দমমিক ৫ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। মেট ব্যয় জিডিপির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মোট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ঐছাড়া প্রাথমিক ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৪ শতাংশ।