তিন কোটি করোনা টিকা’র ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পাচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
গ্রাফিক্স: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা(১৯ জানুয়ারি): করোনাভাইরানের টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামি বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে তিন কোটি কোভিড-১৯ এর টিকা কিনতে সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এতথ্য জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, কারোনাভাইরাসের টিকা কিনতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের চাহিদা বিপরীতে অর্থমন্ত্রনালয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে টিকা কিনতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি থেকে অনুমোদন নেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এই কারণে টিকা ক্রয় প্রস্তাব ক্রয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও বির্পযয়ের মুখে পড়ে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবং টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে টিকা ক্রয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গত বছরের ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) ও বেক্সিমকোর ফার্মাসিউটিক্যালসের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা টিকা পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি ডোজ টিকা ৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩ কোটি টিকার দাম পড়ে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় (এক ডলার সমান ৮৪ দশমিক ৭৭ টাকা হিসেবে) এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস(পিপিআর)-২০০৮ এর তফসিল-২ এর বিধি-৭৬(১) অনুযায়ী সরাসরি চুক্তির আওতায় জরুরি পরিস্থিতি বা সংকট মোকাবেলায় পণ্য ক্রয়ে মন্ত্রণালয়/বিভাগের ক্ষমতা ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা হওয়ায় এই ক্রয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ)-২০০৬ এর ধারা ৬৮ অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির অনুচ্ছেদ ২.১ অনুযায়ী সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এর প্রস্তুত করা প্রস্তাবিত ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের ক্রয় মূল্য ৪ মার্কিন ডলার। চুক্তির অনুচ্ছেদ ৮.১ অনুযায়ী সেবামূল্য হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকাল লিমিটেড প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১ (এক) মার্কিন ডলার দিতে হবে। এই হিসাবে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের মূল্য দাঁড়ায় ৫ মার্কিন ডলার।
জানা গেছে,গত ১০ নভেম্বর ভ্যাকসিন কেনা ও আনুষঙ্গিক উপকরণ ব্যয়সহ সর্বমোট এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ থেকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার এবং ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অর্থাৎ সর্বমোট এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন পেতে চুক্তির অনুচ্ছেদ ২.৫.১ এবং ২.৫.২ এর শর্ত অনুযায়ী প্রথম কিস্তিতে অগ্রিম হিসাবে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াকে গত ৫ জানুয়ারি ৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় (ঐদিনের বিনিময় মূল্য অনুযায়ী) ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ দেওয়া হয়।
চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় কিস্তিতে অগ্রিম হিসাবে ৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেয়ার জন্য সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া চিঠি দিয়েছে। মোট চুক্তি মূল্য ১২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ডলার বিনিময় মূল্যহার অনুযায়ী এই টাকার পরিমান বাড়তে বা কমতে পারে।
সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগ কর্তৃক অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ, ২০২০ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর), ২০০৮ বিধি ৩৬ এর উপবিধি (৩) (৩) এর (অ) ও (আ) অনুযায়ী অনুন্নয়ন বাজেটে পণ্য/যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদির ১০০ (একশত) কোটি টাকার উর্ধ্বে সব ক্রয়-প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। প্রস্তাবিত ক্রয়ের চুক্তি মূল্য একহাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা হওয়ায় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।