কোভিড-১৯ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বাড়িয়েছে: সানেম
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৪ জানুয়ারি): করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই বছরে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার দ্বিগুন বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর এক জড়িপে জানা গেছে।
সানেমের "কোভিড-১৯ ফলআউট অন পোভার্টি অ্যান্ড লিভলিহুডস ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক জড়িপে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে দারিদ্রের হার ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে।
শনিবার এক ওয়েবিনারে জড়িপের ফলাফল প্রকাশ করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, "শহর ও গ্রামীণ দুই অঞ্চলেই দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।"
জড়িপে দেখা গেছে উচ্চ দারিদ্র্যের হার গ্রামাঞ্চলে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর নিম্ন দারিদ্র্যের হার গ্রামীণ অঞ্চলে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৯ শতাংশ।
২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ মাথাপিছু গড় ব্যয় অতি দরিদ্রের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, মধ্য দরিদ্র ২৯ শতাংশ কমেছে, এবং দুর্বল দরিদ্রদের ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এ সঙ্কট মোকাবিলা করতে, বিভিন্ন পরিবার মহামারীতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। যেমন, ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ ধার কর্যের আশ্রয় নিয়েছে, ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করেছে, ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ অ-খাদ্য সামগ্রীতে ব্যয় হ্রাস করেছে এবং ২৭ দশমিক ০২ শতাংশ তাদের খাদ্য তালিকায় অনিচ্ছাকৃত পরিবর্তন এনেছে। আর ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ পরিবার বন্ধু এবং আত্মীয়দের দানের ওপর নির্ভর করেছে।
রায়হান জড়িপে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোভিড-১৯ এর দারিদ্র্যের হারের ওপর এ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা?
এর জবাবে তিনি বলেন, সঙ্কট অব্যাহত থাকবে কি না তা বোঝার জন্য, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির সন্ধান করা গুরুত্বপূর্ণ যেগুলি সবচেয়ে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকগুলো পূরণ করা সম্ভব কিনা সেটাও দেখতে হবে।
তাই, তিনি সুপারিশ করেন যে ভবিষ্যতের সমীক্ষাতে অতি ধনী জনগোষ্ঠীর উপর মহামারীর প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ জড়িপ নিশ্চিত করেছে যে, জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশের আয় ও সঞ্চয় হ্রাস এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। "অতএব, ধারণা করা যায় বিগত বছরগুলিতে আর্থ-সামাজিক বিকাশ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে যে মাইলফলক অর্জিত হয়েছে তার অনেকগুলি কোভিড-১৯ সঙ্কটের কারণে বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে" বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি অবশ্য স্বীকার করেন যে, মহামারীর আগেও একটি ইঙ্গিত ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অতটা ব্যাপক ছিল না।
যেহেতু দরিদ্র পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন অত্যন্ত সীমিত তাই এ সঙ্কট নিঃসন্দেহে সমাজে বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক পাঁচটি পরামর্শের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে: কোভিড-১৯ সংকটের ব্যবস্থাপনা, দরিদ্রদের মাঝে সরাসরি নগদ অর্থ বিতরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের স্থিতিশীল দাম, দুর্নীতি হ্রাস এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো।