চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ হাজার কোটি টাকার পণ্য জট
শাহীনুর আকতার উর্মি || বিজনেস ইনসাইডার
ইনফোগ্রাফ: বিজনেসইনসাইডারবিডি
চট্টগ্রাম (০৭ ফেব্রুয়ারি): চট্টগ্রাম বন্দরে পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে ১১ হাজার কোটি টাকার পণ্য। নির্দিষ্ট সময়ে নিলাম না হওয়ায় বন্দরে পণ্যের জটলার পাশাপাশি জায়গার সংকট তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নয় হাজার ৮৭০ চালানের বিপরীতে ৮ হাজারের বেশি কনটেইনার ভর্তি পণ্য আটকে আছে। যার ওজন প্রায় ১২ হাজার ৩২১ টন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খালাস না হওয়া এসব পণ্য বন্দরের বিপুল পরিমাণ জায়গা দখল করে রেখেছে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সরবরাহ না হওয়া পণ্যের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টরাও আমদানিকারকদের কাছ থেকে ওইসব কনটেইনারের ভাড়া না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বন্দর আইন অনুযায়ী, বন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ে পণ্য খালাসে ব্যর্থ হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিলামের মাধ্যমে এসব বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কমিশনার ফয়সাল বিন রহমান বিজনেসইনসাইডারবিডিকে জানান, কোন চালানের সময়সীমা যদি ৩০ দিন পেরিয়ে যায়, তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটা আনুষ্ঠানিক ভাবে নিলাম প্রক্রিয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।
তিনি আরো জানান, আমদানিকারকরা চালান পরিত্যক্ত রাখায় বন্দও কর্তৃপক্ষ এসব চালান বিপরীতে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিত্যক্ত এসব চালানের যাতে জট না লাগে সেজন্য কাল বিলম্ব না করেই নিয়মিত নিলামের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দাফতরিক কাজে বিলম্ব এবং আমদানিকারক ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাব পেতে বিলম্বের কারণে নিলাম ডাকতে দেরি হয় এবং বেশি সময় লাগে।
ফয়সাল জানান, পাঁচ বছরে এসব আটকে থাকা পণ্যের কারণে কাস্টম হাউজ ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন বন্দরে আটকে থাকা শতাধিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য, কসমেটিকস, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, অটোমবাইল, ইলেক্সট্রনিক, চামড়াজাত পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, টাইলস এবং সিরামিকস।
নিয়মিত নিলাম আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট এবং বিভিন্ন সংস্থা আলাদা করে কাস্টমস এবং এনবিআরকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে।
ইনসক্যাপ শিপিং লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারের বিদ্যুৎ বিল বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেয়ার পাশাপাশি পচনশীল পণ্য বা পণ্য ধ্বংস করার ব্যয় শিপিং এজেন্টকেই বহন করতে হয়।
নিলাম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কাস্টমস হাউজগুলো ২০১৫ সালে ই-টেন্ডারের উদ্যোগ নিয়েছিল।
বন্দর কর্মকর্তা এবং আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আমদানি করা পণ্য ডেলিভারি না নেয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় বাজারে পণ্যের মূল্য পড়ে যাওয়া, শিপমেন্টের পক্ষে প্রকৃত নথিপত্র জমা দিতে ব্যর্থতা, ক্লিয়ারেন্স পারমিট রিপোর্ট না পাওয়া, অনিয়মের অভিযোগে আরোপিত জরিমানা দিতে আমদানিকারকদের অস্বীকৃতি উল্লেখ্য।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ডেলিভারি না হওয়া কনটেইনারের কারণে বন্দরের ভেতরে অনেক জায়গা আটকে আছে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্দরের জায়গা আটকে রাখা এসব কনটেইনার ভাড়া দেওয়া যায় না। তাই এসব কনটেইনারের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে।