ভারত থেকে আরো একলাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ফাইল ফটো
ঢাকা (১০ ফেব্রুয়ারি): ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজিউমারস ফেডারেশন (এনসিসিএফ) থেকে সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) ভিত্তিতে আরো একলাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য ব্যয় হবে ৩৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
দেশের বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। এ অবস্থায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষকের উৎসাহমূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে ধান চাল কিনে থাকে। কিন্তু বিগত বোরো ২০২০ মৌসুমে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪.৪৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে ২ লাখ মেট্টিক টন ধান এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্টিক টন চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫২ হাজার ২৭৬ মেট্টিক টন চাল ও ৭ হাজার ৫৬৭ মেট্টিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘন ঘন বন্যা, অতি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় আমফানসহ করোনা মহামারির কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হওয়ায় বাজারে ধান ও চালের দাম উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংসহত করার স্বার্থে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের সরকারি মজুত বাড়িয়ে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ দামে খাদ্যশস্য কেনা সম্ভব হয়। এই বিবেচনায় ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজিউমারস ফেডারেশন (এনসিসিএফ) সাড়া দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য ২৪ জানুয়ারি নয়া দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনারের মাধ্যমে এনসিসিএফ-এর প্রতিনিধি দলকে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ওই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিসিএফ-এর সঙ্গে ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয় বিষয়ক নেগোসিয়েশন কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জি টু জি পদ্ধতিতে চাল আমদানির চুক্তিনামার শর্তাদি এবং দাম নিয়ে বিশদ আলোচনা ও নেগোসিয়েশন হয়। আলোচনা ও নেগোসিয়েশন শেষে ভারত হতে ৮০ হাজার মেট্টিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল প্রতি মেট্টিক টন ৪৩৪ ডলার দরে সিআইএফ-এলও (কস্ট, ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার) টার্মে এবং সিপিটি (ক্যারেজ পেইড) টার্মে ৪২০ ডলার দরে সান্তাহার (বগুড়া) রেলযোগে ২০ হাজার মেট্টিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয় এবং এ প্রেক্ষিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ইতোমধ্যে এফওবি দাম প্রতি মেট্টিক টনে ২ ডলার বেড়েছে। ২৯ জানুয়ারিতে এফওবি মূল্য প্রতি মেট্টিক টন ছিল ৩৯৪ ডলার। প্রতিনিয়ত চালের বাজাওে দাম বাড়ছে বিধায় ভারতের এনসিসিএফ থেকে সিআইএফ-এলও টার্মে প্রতি মেট্টিক টন ৪৩৪ ডলার দরে ৮০ হাজার মেট্টিক টন ও সিপিটি টার্মে রেলপথে প্রতি মেট্টিক টন ৪২০ ডলার দরে ২০ হাজার মেট্টিক টন মোট ১ লাখ মেট্টিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল (সর্বোচ্চ ৫শতাংশ ভাঙ্গাদানা বিশিষ্ট) কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ৩ ফেব্রুয়ারির দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে মজুদের পরিমাণ চাল ৫ লাখ ২১ হাজার মেট্টিক টন ও গম ১ লাখ ৪৫ হাজার মেট্টিক টন অর্থাৎ সর্বমোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার মেট্টিক টন। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য দেশের চালের চাহিদা ও মজুত পরিস্থিতি এবং বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমনের বিষয় বিবেচনা করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংসহত করার স্বার্থে একলাখ টন চাল সংগ্রহ করা জরুরি বলে মনে করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।