ঈদের আগে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা চান গার্মেন্টস মালিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
গ্রাফিক্স বিজনেস ইনসাইডার বিডি
ঢাকা(০৩ মার্চ): আসন্ন দুটো ঈদে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধে নতুন করে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা চায় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ পোশাক খাতের সব মালিকেরা।
বুধবার বিকেএমই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসছে দুই ঈদ পর্যন্ত পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন করে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা দরকার। এছাড়া পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধে কমপক্ষে ১৪-১৫ বছর সময় দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ এবং আগের প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ একীভূত করে উদ্যোক্তাদের আরও একবছর সময় দিয়ে এর বিপরীতে ১৮ মাসের পরিবর্তে কমপক্ষে ৩৬ মাসের কিস্তি পরিশোধের সময় দিতে হবে। তাতে পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অন্যথায় এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল ৪৫ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষভাবে দুই কোটি মানুষ ও তাদের পরিবারের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
এতে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্প খাতে যে বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পাবার লক্ষ্যে মঙ্গলবার হোটেল পূর্বাণীতে বিকেএমইএ’র সদস্যদের নিয়ে এক বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উঠে আসে, গত কয়েকমাস ধরে করোনার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্রেতারা (বায়ার) তাদের রফতানি আদেশকৃত পণ্য নিতে পারছেন না। ফলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদেও প্রস্তুতকৃত তৈরি পোষাক স্টক হয়ে গেছে।
সভায় এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও টাস্কফোর্স ফর আরএমজি’র প্রধান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন, বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএর সভাপতি সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুতার লাগামহীন এবং অনির্ধারিত মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজের পণ্য পরিবহন ব্যয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি,প্রণোদনার বিপরীতে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যাংকের চাপ এবং অন্যদিকে কাস্টমস, ভ্যাট, ট্যাক্স ও বন্ড কমিশনারেট সংক্রান্ত নানাবিধ অযৌক্তিক চাপের কারণে তৈরি পোশাক শিল্প ধারাবাহিকভাবে ২০২০ সাল থেকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে চলছে। ফলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা ছাড়া বিকল্প কোনও উপায় নেই।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এমনিতেই রফতানি আদেশ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, অনেক ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তার ওপর উদ্যোক্তা এবং তার ব্যাংকের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৪ থেকে ১৫ বছর করার ব্যাপারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনও আপত্তি না থাকলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৮ বছরের বেশি কাউকে কিস্তি পরিশোধের সময় না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে অনেক উদ্যোক্তাই এখন ‘ক্লাসিফাইড’ হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই দীর্ঘমেয়াদী ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৃদ্ধি করা না হলে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তৈরির পোশাক শিল্পখাতের অনেক উদ্যোক্তাই ‘ক্লাসিফাইড’ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যা প্রকারান্তরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। তাই সভায় উপস্থিত শিল্প উদ্যোক্তারা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এবং একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ বছর করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত উদ্যোক্তারা এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, আগামী সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত তৈরির পোশাক শিল্পখাতের চলমান অচলাবস্থার উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তার ওপর এ সময়ের মধ্যেই রমজান ও দুটি ঈদ রয়েছে। যেখানে শ্রমিকদেও বেতনের পাশাপাশি বোনাস ও অন্যান্য ভাতা প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে করোনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব বিবেচনায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্রদানের কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা সেসময় কারখানা চালু রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল এবং শ্রমিকদেরও বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনও ফিরে আসেনি। অথচ এর মধ্যেই ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংকের চাপের মুখে পড়েছে উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশের মূল রফতানি বাজার ইউরোপে অর্থনীতি সংকোচনের মুখে পড়ায় এখনও পর্যন্ত রফতানি আদেশ সেই অর্থে বাড়েনি। তাছাড়া যা কিছু রফতানি আদেশ হাতে রয়েছে তাও আবার সুতার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে কার্যাদেশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তাই আসন্ন দুটি ঈদে শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওই ধরনের আর একটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা জরুরি বলে মনে করেন শিল্প উদ্যোক্তারা।