দেশের ৭৫ শতাংশ জিনসের চাহিদা মেটায় যে মার্কেট
মোঃ মাঈনুল আহসান ও হাসিবুল হাসান শান্ত || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: কারখানায় প্যান্ট সেলাইয়ে ব্যস্ত শ্রমিকরা
ঢাকা (১৬ মার্চ): এ যেন জিনস প্যান্টের শিল্পাঞ্চল। রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গার ওপারেই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, আগানগর গুদারাঘাট এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে এই পোশাকশিল্প কারখানা। খুপড়ির মতো ছোট ছোট ঘরে ১০-১৫ জন শ্রমিক নিয়েই গড়ে উঠেছে এক একটি গার্মেন্টস।
স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা এই শিল্পাঞ্চল দেশের অভ্যন্তরীণ পোশাকের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে। মূলত জিনস ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্টের জন্যই বিখ্যাত এই অঞ্চল। সারাদেশে ব্রান্ড বিহীন প্যান্টের বেশিরভাগই প্রস্তুত হয় এখানকার ছোট ছোট গার্মেন্টসে।
তেমনি একজন ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ‘রাফি প্যান্টের’ মালিক শেখ শহীদ। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এই অঞ্চলে ব্যবসা করছেন। সামনে রোজা ও ঈদকে ঘিরে তার কারখানায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। তিনি নিজেও প্যাকিংয়ের কাজ করছেন। কাজ করতে করতেই তিনি কথা বলেন, এ ব্যবসার নানান দিক নিয়ে।
তিনি জানান, বছর জুড়েই কম-বেশি ব্যবসা হয় কেরানীগঞ্জে। তবে আমাদের মূল ব্যবসার মৌসুম হচ্ছে রমজান ও ঈদ। এছাড়া শীতেও ভালো বেচাকেনা হয়। তবে রোজার ঈদে ব্যবসাও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। সারা বছর যে ব্যবসা হয় তার ৬০-৭০ শতাংশই রোজার ঈদ কেন্দ্রিক।
এখানে ব্যবসায় লাভ কেমন হয়, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ব্যবসার লাভ মূলত নির্ভর করে পণ্যের মানের উপর। প্যান্টের মান যে যত ভাল করতে পারবে, সে তত বেশি বিক্রি করতে পারবে। তার লাভও তত বেশি হবে। সে অনুযায়ী দেখা যায়, আমরা গড়ে প্রতি পিস প্যান্টে ২০-২৫ টাকার মতো লাভ পাই। আর বছর শেষে আমার লাভ থাকে প্রায় ১৫-১৮ লাখ টাকার মতো।
তবে গত বছর করোনার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই ব্যবসা। এসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যাংকগুলো থেকেও কোন আর্থিক সহযোগিতা বা ঋণ পাননি তারা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, গতবছর করোনার কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে সে সময় কোন ব্যাংক ঋণ বা প্রণোদনাও পাইনি। তখন আমরা ঋণ করে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। তবে এবার আমরা গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর করোনার পাশাপাশি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আরও কিছু নতুন সমস্যা। এর মধ্যে রয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ’র ১২০ বছরের পুরনো নৌ-ঘাট বন্ধ করে দেয়া, বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাপড়ের ওয়াশ কারখানা বন্ধ করে দেয়া।
এ সম্পর্কে আরেক ব্যবসায়ী ঈমাম ফ্যাশনের মালিক এ.ডি.এম জাকারিয়া জানান, আমাদের এই অঞ্চলের মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে নৌ পথ। এই পথেই আমাদের কাস্টমার আসে ও বেচাবিক্রি হয়। কিন্তু, কিছুদিন আগে হুট করেই আমাদের কিছু না জানিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ আমাদের এখানকার ঘাট বন্ধ করে দেয়। ফলে আমরা কাস্টমার পাচ্ছি না, বেচাবিক্রিও কমে গেছে।
অপর এক ব্যবসায়ী এ ওয়ান প্যান্টের মালিক, জাকির হোসাইন পলাশ জানান, কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করেই হাইকোর্টের নির্দেশনাক্রমে আমাদের এখানকার ওয়াশ কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের এই শিল্পপল্লীতে বেশির ভাগ মার্কেটেরই নিচের তলায় পাইকারি ও খুচরা পোশাকের দোকান হলেও উপরের তলায় ছোট ছোট কক্ষে থাকে কারখানা। তবে এই মার্কেট গুলোতে কি পরিমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ও কারখানা আছে, সে বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। এমনকি এখান থেকে কি পরিমাণ আয় ব্যয় ও বেচাকেনা হয় তারও নেই সঠিক তথ্য।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ স্বাধীন শেখ বলেন, আমাদের কাছে সঠিক হিসাব না থাকলেও এখানে আনুমানিক ২০০-২৫০ টি মার্কেট ও ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৩-৪ হাজার কারখানা রয়েছে। আর কারখানা মালিক, শ্রমিক, দোকান প্রতিনিধি সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে।