জলাবদ্ধতায় খাতুনগঞ্জে ১২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা
চট্টগ্রাম (১৯ মার্চ): চট্টগ্রাম ভিত্তিক বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারণে গত বছর ১২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্ষাকালে ঘন ঘন জলাবদ্ধতার কারণেই এ বিপুল অংকের ক্ষতি শিকার হয়েছে খাতুনগঞ্জ।
এছাড়া একই কারণে খাতুনগঞ্জে ২০১৯ সালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৯৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৪৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ৪৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ৪৪ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং ২০১১ সালে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন জাতীয় স্থিতিস্থাপক কর্মসূচির আওতায় ‘স্থানীয় বাণিজ্যে জলাবদ্ধতার অর্থনৈতিক প্রভাব: খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এ সমীক্ষা পরিচালনা করে।
এতে আরও দেখা গেছে যে, কয়েক বছরে জলাবদ্ধতার কারণে লোকসানে বাধ্য হয়ে মাঝারি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ থেকে তাদের ব্যবসা পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছেন।
এ সমীক্ষার অন্যতম প্রধান গবেষক প্রফেসর রিয়াজ মল্লিক বলেন, "বাজারের চারপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং বর্ষার সময় এই অঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।"
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বর্ষার সময় প্রবল জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জের পাশাপাশি পুরো বন্দর এলাকা ডুবে যায়।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, ধীরে ধীরে চাক্তাই খাল সংকুচিত করে ফেলা, এর ওপর অবৈধ দখলদারি, নিয়ম বর্হিভুত জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাগির আহমেদ বলেন, “গত দশ বছর ধরেই খাতুনগঞ্জের পাশাপাশি পুরো বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা যদি সমস্যা কমিয়ে আনতে পারি, তবে এ বাজারের পুরনো গতি ফিরে আসবে। গত কয়েক বছরে যারা জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারাও ফিরে আসবেন।
সমীক্ষায় জলপথের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ যুক্ত করতে বাজারের চারপাশে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবস (এমটিএইচ) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও নদী-কেন্দ্রিক পর্যটন, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা, বর্জ্যের অনসাইট ট্রিটমেন্ট এবং পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এম মাহাবুবুল আলম বলেন, “চাট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সমস্ত পানি ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রক্ষায় এক সঙ্গে কাজ করা উচিত।”