১১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১.৫৭ গুণ বেশি।
আজ সোমবার (৩ জুন) অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪-২৫ : উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না। বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১০ লক্ষ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯২.১৩ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়।
রাজস্বের বড় একটা অংশ কালো টাকা উদ্ধার করে আসবে উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জীভূত মোট কালো টাকার মাত্র ০.৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি, যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থপাচার প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতি জানায়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মোট পুঞ্জীভূত অর্থপাচারের আনুমানিক পরিমাণ হবে ১১ লক্ষ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জীভূত মোট অর্থপাচারের ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি, যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
আর বাজেটের বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার (মোট ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ৫৬.১ শতাংশ), সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ গ্রহণ (মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১৪.৬ শতাংশ), এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ২৯.৩ শতাংশ)।
তবে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নিটের কোনো ভূমিকা থাকবে না উল্লেখ করে অর্থনীতি সমিতি জানায়, যা চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটে ঘাটতি পূরণে ৩৯.৫ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ, আমাদের বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণের দ্বারস্থ হতে চাই না।
সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি জানায়, বিগত কয়েক বছরে বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথম ৩ মাসে বাজেট ৫-৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। ৬ মাসে এ বাস্তবায়ন হয় ১৪-১৫ শতাংশ। ৯ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ২৬-২৭ শতাংশ। বছরের শেষের দিকের এক দেড় মাসে অনেক খরচ করা হয় এবং এ সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশের বেশি।
অর্থবছরের শেষের দিকে এত টাকা তাড়াহুড়ো করে খরচ হওয়ায় কাজের মান খারাপ হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই তাড়াহুড়ার কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার বড় ধরনের সুযোগ থাকে। বছরের শুরু থেকে বাজেট বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা রীতিমতো উদ্বেগজনক।