মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: রিজার্ভে টান আর বিশ্ববাজারের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে সরকার যখন আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে বিদুতের দাম বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মূল্যস্ফীতির এই লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্বনীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
“আমাদের গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে। একইসাথে কর রাজস্বের পরিমাণ জিডিপি’র ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, করজাল সম্প্রসারণ এবং কর আদায় ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন এবং হিউম্যান ইন্টারফেস কমানো ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।”
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে ১১ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে, যা বহু বছরের মধ্যে বেশি। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
এমন বাস্তবতায় গড় মূল্যস্ফীতি কী করে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখা যাবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় মেলেনি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপের মুখে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ২০২২ সালে আইএমএফ এর ঋণের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। ভর্তুকি কমানোসহ নানাবিধ শর্তে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ১১৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার দুই কিস্তিতে পেয়েছে সরকার।
এর আগে ও পরে বাংলাদেশ পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে।
আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা, প্রতিবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ে গড়ে ৫ শতাংশ করে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পণ্যমূল্যে।
ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবে চলতি বছরের মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম খুচরায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৫ শতাংশ দর বাড়িয়েছে সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য এখন ৪ টাকা ৬৩ পয়সা টাকা এবং ৬শ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারী গ্রাহকের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৪ টাকা ৬১ পয়সা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভারিতে গড়ে পাইকারিতে প্রতি ইউনিটের দর আগের ৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ০৪ পয়সা হয়েছে। খুচরায় ৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা হয়েছে।
আগে ৪২২টি পণ্যের মূল্য ধরে মূল্যস্ফীতি হিসাব করত পরিসংখ্যান ব্যুরো। আইএমএফ এর পরামর্শ মেনে গত বছরের মে মাস থেকে আরও প্রায় ৩০০ পণ্যকে ‘ঝুড়িতে’ যুক্ত করা হয়।
চলতি অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছুঁইছুঁই ছিল, বছর শেষে তা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নেমে আসার আশা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান দেখালেও তার কোনো লক্ষণ বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে চালু রাখা হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ হতে নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা প্রদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসৃজন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলাসহ সরকারের অগ্রাধিকার খাতসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিক্রমাকে প্রাধিকার দিয়েই এই অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।”