সর্বজনীন পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হবে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: সর্বজনীন পেনশন স্কিমের (কর্মসূচি) টাকা মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মানের বন্ড, ট্রেজারি বিল, সুকুক এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়নাধীন বা বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্পের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। পেনশনের টাকা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে, তা উল্লেখ করে আজ রোববার সর্বজনীন পেনশন তহবিল (বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আট সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। এ কমিটি তহবিলের অর্থ কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক লাভজনক পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করবে। তহবিলের কোনো অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই দেশের বাইরে বিনিয়োগ করা যাবে না। সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটিই মূলত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিনিয়োগের তথ্য সময়-সময় পরিচালনা পর্ষদকে জানাবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, ট্রেজারি বন্ড, ট্রেজারি বিল এবং সুকুক বা সুকুকের মতো অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটিজ হবে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র। আর পেনশনের অর্থ স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা যাবে দীর্ঘ মেয়াদে ‘এএ’ এবং স্বল্প মেয়াদে ‘এসটি-ওয়ান’ মান পেয়েছে এমন কোনো তফসিলি ব্যাংকে। তবে এই মান মূল্যায়ন হতে হবে বাংলাদেশে অনুমোদিত কোনো ঋণমান সংস্থা বা স্বীকৃত কোনো আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থার মাধ্যমে। একাধিক মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা একই প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন রেটিং (মান) দিলে নিম্নতম মানকে প্রকৃত মান হিসেবে গণ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে বিধিমালায়। এ ছাড়া সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়নাধীন বা বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্প বা প্রকল্পের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কোনো অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। আবার একক কোনো খাতে পেনশনের অর্থের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হবেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (তহবিল ব্যবস্থাপনা)। অন্যদের মধ্যে থাকবেন কর্তৃপক্ষের সদস্য (বিনিয়োগ নীতি), অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা, যাঁদের একজন হবেন ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের, অন্যজন হবেন প্রবিধি অনুবিভাগের।
কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক পদের নিচে নন এমন পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা থাকবেন। আরও থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান বা তাঁর মনোনীত অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন। পেনশন কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা থাকবেন, যিনি হবেন কমিটির সদস্যসচিব।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের উপস্থিতি হবে কমিটি বৈঠকের কোরাম। বছরে চারবার কমিটির বৈঠক হতে হবে। বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার জন্য কমিটি যেকোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন, তবে তাঁর ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না।
বিধিমালার খসড়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ভাবা হয়েছিল বাণিজ্যিক দোকান বা এমন কোনো স্থাবর সম্পত্তি, যা থেকে নিয়মিত আয় আসার সুযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা বাদ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি নামে আলাদা দুটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবও ছিল খসড়ায়। এমনকি বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ নেবে বলেও প্রস্তাব ছিল। এ দুই পরিকল্পনা থেকেও সরে এসেছে সরকার।