সাদিক অ্যাগ্রোর মালিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি, বিক্রি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দুই পরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, কেন্দ্রীয় গোপ্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম, পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান, গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের বায়ার অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (লিভ রিজার্ভ) ডা. ফিরোজ আহমেদ খান, উপপরিচালক (লিভ/রিজার্ভ ট্রেনিং অ্যান্ড রিজার্ভ পদ) ডা. এ বি এম সালাহ উদ্দিন, সাদিক এগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন এবং তার বন্ধু তৌহিদুল আলম জেনিথ।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো বিটল জাতের একটি ছাগল ১২ লাখ টাকায় কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে এক তরুণ। পরে এ ঘটনাটি সংবাদ আকারে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে সামনে চলে আসে তার বাবা মতিউর রহমানের নাম, যিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠে যায়, একজন সরকারি আমলা হয়ে কীভাবে তার ছেলে বিলাসবহুল সব শখ পূরণ করেন। এরপর একে একে খোঁজ মিলতে থাকে এনবিআরের এ কর্মকর্তার অবৈধ পন্থায় অর্জিত অঢেল সম্পদের। এরই মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় সাদিক এগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী ইমরান হোসেন এবং তার উচ্চবংশীয় পশুর খামার নিয়েও। পরবর্তীতে সামনে চলে আসে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গরু আমদানি করে ইমরানের এগ্রো ব্যবসার ব্যাপারটিও। ফলশ্রুতিতে মতিউর রহমানের পাশাপাশি ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নামে দুদক।
২০২১ সালে ১৮টি আমেরিকান ব্রাহামা জাতের গরু বাংলাদেশে এনে তোলপাড় সৃষ্টি করেন ইমরান হোসেন। কিন্তু ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা কাস্টমস।
করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ব্রাহমা জাতের গরুগুলো বিমানবন্দরে ধরা পড়লে সেসময় গ্রহণ করতে যাননি কেউ। পরে জানা যায়, ওই গরুগুলোর আমদানিকারক সাদিক এগ্রো লিমিটেড। তারা কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে শাহিওয়াল গরুর নাম দিয়ে ব্রাহমা আমদানি করেছিল। আর এটা করা হয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে।
জব্দ গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। পরবর্তীতে রহস্যজনকভাবে গরুগুলো চলে যায় ইমরানের সাদিক এগ্রোতে।
জানা যায়, অবৈধভাবে আনা ব্রাহমা গরুগুলো ছিল প্রজনন অনুপযোগী। ফলে নিয়ম অনুসারে এসব প্রজনন অনুপযোগী গরু খামারিদের সংগঠনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ইমরান কৌশলে এসব গরু নিজের নামে নিয়ে নিয়েছেন। তার ওপর শর্তানুযায়ী এসব গরুর মাংস বিক্রি না করে কোরবানীর পশু হিসেবে বাজারেও বিক্রি করেছেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান এই ব্রাহমা জাতীয় নিষিদ্ধ গরু উঠিয়েছিলেন।
এছাড়া ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ২, ৩ ও ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালায় দুদক টিম। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।