১৮ কোম্পানির মাধ্যমে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বেক্সিমকো
নিজস্ব প্রতিবেদক: || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বেক্সিমকো গ্রুপ ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে সেই রপ্তানি মূল্য ফেরত না এনে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির ডেটাবেজ অনুসারে, অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এর সবগুলোই বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিক তদন্তে সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট জানতে পেরেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ঋণ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা আছে, বেক্সিমকো গ্রুপ বিগত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে।এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে মানি লন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন যে সালমান এফ রহমান পাচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান সৌদি আরবে একটি বড় ওষুধ কোম্পানি খুলেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তা। সৌদি আরবের ওই কোম্পানির বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে বলেও জানান তিনি।
সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, গ্রুপটি পণ্য রপ্তানির জন্য ক্রেডিট লেটার খুলে ৮০ শতাংশ মূল্যের বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়েছে। এরপর আর রপ্তানির অর্থ ফেরত আনেনি এবং ঋণগুলোও পরিশোধ করেনি। বেক্সিমকো গ্রুপ এভাবে অর্থপাচার করেছে।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ–বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। এক দোকান কর্মচারীকে হত্যার মামলায় গত ১৩ আগস্ট থেকে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি সালমান এফ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।