ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লেনদেনে ‘রিটেইল অ্যাকাউন্ট’
|| বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (১৭ নভেম্বর): ক্ষুদ্র ও অভিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আরও বেশি সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘রিটেইল অ্যাকাউন্ট’ নামে নতুন এ সেবা চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে হকার বা ফেরিওয়ালাও নগদ টাকার বদলে মোবাইল ফোনে ব্যবসায়িক লেনদেন সারতে পারবেন। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মেজবাউল হক স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে এ তথ্য জানা গেছে।
এ হিসাবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই হিসাব খোলার জন্য তাকে টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স বা বাড়ি ভাড়ার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। কীভাবে এ হিসাব চলবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে সোমবারের ওই সার্কুলারে।
বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো ওই সাকুলারে বলা হয়েছে, “শ্রম নির্ভর অতিক্ষুদ্র/ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত সেবা প্রদানকারী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি/ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হিসাব খোলা সহজ করার মাধ্যমে তাদের পেমেন্ট গ্রহণ পদ্ধতিকে ডিজিটাল ও প্রাতিষ্ঠানিক করার উদ্দেশ্যে এই হিসাব প্রচলন করা হয়েছে।”
বর্তমান ব্যবস্থায় ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যবসায়িক লেনদেনের সুযোগ নেই। কারণ ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে দৈনিক, মাসিক ও বার্ষিক লেনদেনের সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে, তার বেশি লেনদেন করতে গেলে ঝামেলা পোহাতে হয়।
আবার ব্যবসায়িক হিসাব খুলতে গেলে টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স বা বাড়ি ভাড়ার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়, যা ক্ষুদ্র বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব না। এ ধরনের ভাসমান উদ্যোক্তাদের ই পেমেন্ট সেবার আওতায় আনতেই ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফসএস) কোম্পানি এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারে এই হিসাব খোলা যাবে।
ফুটপাতে বা ভ্যানে করে যারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সব্জি, ফল, মাছ, বা যে কোনো পণ্য বিক্রি করছেন, অথবা বুট পালিশ, জুতো সেলাইয়ের মত সেবা দিচ্ছেন, তারাও চাইলে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যক্তির নামে অ্যাকাউন্ট খুলে করতে পারবেন ব্যবসায়িক লেনদেন। সুপারশপ বা শপিংমলের মত তিনিও কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের দাম নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র/ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি/ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীদের পণ্য বা সেবা বিক্রির বিপরীতে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য এবং সাপ্লাই বা ভ্যালু চেইনের ক্রয়মূল্য পরিশোধের জন্য এই রিটেইল হিসাব খোলা যাবে।
ব্যাংক ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’
১. ওই নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে যাদের আগে থেকেই ব্যক্তিগত চলতি ব্যাংক হিসাব আছে, তার মাধ্যমেই তাদের রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া যাবে। যাদের ব্যক্তিগত চলতি হিসাব নেই, তাদের নতুন হিসাব খুলে রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া যাবে। এ ধরনের হিসাবের জন্য কোনো লেনদেন সীমা প্রযোজ্য হবে না।
২. তবে ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে খোলা ব্যক্তিগত চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জারি করা সার্কুলারের ই-কেওয়াইসি নীতিমালা ও লেনদেন সীমা কার্যকর হবে। ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে খোলা হিসাবে মাসিক লেনদেন কোনোভাবেই দশ লাখ বা এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি ১০ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না।
৩. এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের পেশা এবং এ ধরনের হিসাব খোলার যোগ্যতা সম্পর্কে ব্যাংককে নিশ্চিত হতে হবে। ব্যাংক সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবী সমিতির প্রত্যায়নপত্র নিতে পারে।
মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসে ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’
১. এ ধরনের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ এমএফএস হিসাবের পাশাপাশি একই এনআইডির বিপরীতে নতুন হিসাব খোলা যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাধারণ কেওয়াইসি নীতিমালা অথবা ই- কেওয়াইসি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
২. এ ধরনের হিসাব সাধারণ এমএফএস এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে খোলা যাবে না। এমএফএস প্রোভাইডার গ্রাহকের পেশা, এই হিসাব খোলার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা এবং গ্রাহকের নিজের এনআইডির বিপরীতে নিজের নামে নিবন্ধিত মোবাইল ফোন দিয়ে হিসাব খুলছেন কি না, ব্যাংককে তা নিশ্চিত হতে হবে। তারপর প্রোভাইডারের নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে অথবা প্রোভাইডারের প্রতিনিধির মাধ্যমে এ ধরনের হিসাব খুলতে হবে। গ্রাহকের ঝুঁকি অনুসারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবী সমিতির প্রত্যায়নপত্র নিতে পারবে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
৩. এ হিসাব থেকে কেবল পেমেন্ট নেওয়া এবং নিজের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। ক্যাশ-ইন, ফান্ড ট্রান্সফার বা অ্যাড মানির মত সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
৪. এ ধরনের হিসাবের লেনদেন সীমা হবে ‘পারসন-টু-রিটেইল’ পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা, মাসে পাঁচ লাখ টাকা এবং রিটেইল-টু-রিটেইল ও মার্চেন্ট-টু-রিটেইল পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা, মাসে তিন লাখ টাকা। পেমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে (রিটেইল-টু-রিটেইল এবং রিটেইল-টু-মার্চেন্ট) দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০ বার লেনদেন করা যাবে; মাসে করা যাবে ২০০ বার।
৫. এ হিসাবের এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি পাঁচ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না।
পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারে ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’
১. এ ধরনের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ পিএসপি হিসাবকে (ই-ওয়ালেট) নতুন এই রিটেইল হিসাবে পরিবর্তন করা যাবে বা একই এনআইডির বিপরীতে নতুন হিসাব খোলা যাবে। বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাধারণ কেওয়াইসি নীতিমালা অথবা ই- কেওয়াইসি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
২. গ্রাহকের পেশা, এ ধরনের হিসাব খোলার যোগ্যতা এবং গ্রাহকের নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে পিএসপি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে এ হিসাব খুলতে পারবে। গ্রাহকের ঝুঁকি অনুসারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবী সমিতির প্রত্যায়নপত্র নিতে হবে।
৩. এ হিসাবের লেনদেনের ক্ষেত্রে পিএসপি (ই-ওয়ালেট) হিসাবের নির্ধারিত লেনদেন সীমা কার্যকর হবে। তবে কোনভাবেই তা মাসিক দশ লাখ টাকা অতিক্রম করবে না এবং এককালীন সর্বোচ্চ স্থিতি পাঁচ লাখ টাকার বেশি হবে না।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, এই তিন ধরনের গ্রাহকরা একইসাথে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব ও মার্চেন্ট হিসাব চালু রাখতে পারবেন না।