ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ইনফোগ্রাফ: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা(১৫ ডিসেম্বর): আবারও চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে। চিকন,মাঝারি ও মোটা চালের দাম গড়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা করে বেড়েছে । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীতে অনেক হাসকি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ধানের দাম বেশী হওয়ায় বেড়েই চলেছে চালের দাম। চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ার কারণে মধ্য ও নিন্ম আয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন বেশি।
এদিকে আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়তে থাকায় আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরগুলোতে খোলা বাজারের চাল বিক্রি (ওএমএস) শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। সোমবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে দেশের ডিসিফুডদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ প্রসঙ্গে বিজনেসইনসাইডার’কে বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বাড়ছে। করোনা মহামারীতে দেশের গুটি কয়েক অসৎ চাল ব্যবসায়ী এই সুযোগ নিচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
সারাদেশের ডিসি ফুড কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে কোন মিল কি পরিমাণ ধান কিনলো, কি পরিমাণ চাল উৎপাদন করেছে, বাজারজাত করেছে এবং মজুতের হিসেব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় পরর্যবেক্ষণ করবে। তারা প্রতিবেদনও দেবেন।
এই বৈঠকে যেকোন মিল নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতার তিন গুণের বেশি চাল বা ধান মজুত রাখতে পারবে না। এর বেশি কোন মজুদ পাওয়া গেলে তা সরকারের ধান-চাল হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে পাঁচ গুণের বেশি ধান চাল মজুত রাখা যেত।
সরেজমিনে রাজধানীর কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সবধরনের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা আগে ছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
মাঝারি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকায়।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন ( টিসিবি ) এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও চালের দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিনিকেট ও নাজিরশাইল (চিকন) চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মাঝারি পাইজাম ও লতা চালের দাম বেড়েছে ৯.৭ শতাংশ । মোটা চালের দাম এক দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে ।
নওগাঁর আলম রাইস মিলের মালিক মোহাম্মদ আলম জানান, নওগাঁয় এখন চিকন চাল কেজি প্রতি ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চিকন চাল ৪২ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,করোনাকালে অনেক হাসকি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ধানের দামও বেড়েছে। যে কারণে চালের দাম বাড়ছে।
মতিঝিল থেকে কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা মোঃ মেহেদী হাসান জানান, করোনার কারনে অনেকেরই বেতন কমে গেছে, চাকরি চলে গেছে। তার মধ্যে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ খাবে কি।
তিনি আরও জানান, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হওয়া উচিত। শুধু ট্রাকসেল করে সবার মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানো যাবে না । কারণ অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারে না।তাই সবাই যেন ন্যায্য দামে চাল কিনতে পারে এর ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
কাওরানবাজারের মেসার্স বরিশাল রাইছ এজেন্সীর চাল বিক্রেতা মোঃ হান্নান জানান, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কেন দাম বেড়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মিল মালিকরা হয়তো চাল মজুত করে রেখে বেশী দামে বিক্রি করছে । তাই আমারাও বেশী দামেই বিক্রি করি।
চালের দাম বেড়ে যাবার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁর চাল ব্যবসায়ী মোঃ মিন্টু মিয়া বিজনেসইনসাইডার’কে জানান, রাইস মিলের মালিকরা চাল মজুদ করে রাখে এবং প্রতি ৫০ কেজি চালের বস্তা ২’শ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তিনি আরও জানান, ৪০০ বস্তা চাল অর্ডার দিলেও দেওয়া হচ্ছে ২০০ বস্তা। ফলে চালের দাম বেড়েই চলেছে।