সরকারি চালান জমা নেওয়ায় ব্যাংক পাবে ০.১০ কমিশন
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ফাইল ফটো
ঢাকা (১৭ ডিসেম্বর): সরকারি চালান জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমিশন পাবে। সঠিক সময়ে চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য এরইমধ্যে নেওয়া কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক।
এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে সোনালী ব্যাংক সরকারি চালান জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ (০.০২) কমিশন পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বিজনেসইনসাইডার’কে বলেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন দিলে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
ব্যাংকের কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সোনালী ব্যাংক এক্ষেত্রে কমিশন পায়। আগামীতে যেসব ব্যাংক এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে, তাদের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে কমিশন দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে তা চূড়ান্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা দেয়ার প্রচলিত পদ্ধতি সহজ করা, গ্রাহক ভোগান্তি কমানো, ভুয়া চালান জমা ও রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে এরই মধ্যে ‘স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি’ চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের যেকোনো শাখায় ট্রেজারি চালানের অর্থ জমা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়টি শাখা এবং সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২২৪ শাখা ট্রেজারি চালান নেয়। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ব্যাংকের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করতে চায় সরকার। ।
চলতি অর্থবছরে সরকারের মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থের অধিকাংশই সরকারের কোষাগারে জমা হয় ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে। যদি মোট রাজস্বের অর্ধেকও চালানের মাধ্যমে জমা হয়, তাহলেও এক্ষেত্রে কমিশন বাবদ ব্যাংকগুলো পাবে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
দেশের সকল ব্যাংককে ট্রেজারি কার্যক্রমের আওতায় আনতে এবং বাস্তবায়ন করার বিষয়ে গত ২৫ নভেম্বর তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। বৈঠকের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, ডেপুটি গভর্নর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক সরকারের চালানের টাকা গ্রহণ করে। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার সফটওয়্যারের মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংককে চালানের টাকা গ্রহণের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের কোষাগারে অর্থ যথাসময়ে জমা না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। এতে সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে। স্বয়ংক্রিয় চালান সিস্টেমের মাধ্যমে যথাসময়ে অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা হবে। সরকারকে ঋণও কম নিতে হবে। তাই তিনি সব তফসিলি ব্যাংককে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে কোনো চালান ভুল হলে তা সংশোধন অথবা কোনো কারণে চালান বাতিল হলে করণীয় সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতিতে ট্রেজারি চালানের যে অর্থ গ্রহণ করা হবে, তা পরবর্তী কর্মদিবসে সরকারের হিসাবে জমাকরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্যও অর্থ মন্ত্রণলায়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কমিশন দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।