এলপিজির দাম কেজি প্রতি ৭২ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা(১৪ জানুয়ারি): সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস( এলপিজি) এর দাম কেজি প্রতি ৭২ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এর্নাজি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইাঅরসি) মূল্যায়ন কমিটি।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে চলা গণশুনানিতে এই দাম নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
তবে এলপিজির দাম কেজি প্রতি ৭২ টাকা সুপারিশ করা হলেও মূল্যায়ন কমিটি সরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সুপারিশ করে ৯০২ টাকা ও বেসরকারি কোম্পানীগুলোর ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৮৬৬ টাকা সুপারিশ করে। এখানে উল্লেখ্য, দেশে সরকারি এলপিজি হয় সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে আর বেসরকারি এলপিজি হয় ১২ কেজির সিলিন্ডারে।
গণশুনানীতে সরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৬শ থেকে বাড়িয়ে ৭’শ টাকা করার প্রস্তাব করে। আর মূল্যায়ন কমিটি সরকারি সিলিন্ডারের দাম প্রস্তাবিত দামের চাইলে আরও ২’শ টাকা বাড়িয়ে ৯০২ টাকা করে। আর বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডারের বর্তমান দাম ১২৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৬৬ সুপারিশ করে।
শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল-ই-ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি কোম্পানির পক্ষে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ফজলুর রহমান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল দামের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্সের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের কারিগরি কমিটি সরকারি এলপি গ্যাস লিমিটেডের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ কেজির প্রতি বোতল (সিলিন্ডার) এলপিজি বিক্রিতে ৩৩৩ টাকা ২৪ পয়সার ক্রস সাবসিডি ফান্ড তৈরির সুপারিশ করে। অর্থাৎ কারিগরি কমিটির এই প্রস্তাব মেনে নিলে গ্রাহক সরকারি এলপিজি কিনলে প্রতি বোতলে এই টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে, যা সাবসিডি তহবিল নামে একটি সরকারি তহবিলে জমা থাকবে। সেখান থেকে পরে সাবসিডি বা ভর্তুকি দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে কমিশনের করে দেওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল এবং জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল নামে দুটি তহবিলে জমা হওয়া টাকা এভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। সে সময় কমিশন বলেছিল, এতে সরকারি খাতের আর্থিক অনটন দূর হবে। আর্থিক সংকট না থাকলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এতে দাম কমে আসবে। কিন্তু তহবিল গঠনের এত বছর পরেও সেই আশা এখনও গুড়েবালি।
গণশুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘এইভাবে সরকারি কোম্পানির দাম বাড়িয়ে ফান্ড করা যায় না। এটি অযৌক্তিক। কোম্পানি বাড়তি এই দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে কিনা, সেটি আগে বিবেচনায় নিতে হবে।’ তিনি বলেন,‘বেসরকারি কোম্পানিগুলো হাইকোর্টের আদেশের পরও দাম বাড়িয়েছে।সেই দামের টাকা আদায় করতে হবে। পাশাপাশি যেসব লাইসেন্সি কোম্পানি এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ভোক্তার অধিকার বিবেচনা করে কমিশন দাম নির্ধারণ করবে বলে আশা করি। রাষ্ট্রীয় খাতের উন্নয়নের বিষয়টি আগে বিবেচনা করতে হবে। সরকারি কোম্পানির এলপিজির দাম বাড়ানোর সুপারিশ না করে উল্টো কমানো দরকার।
অটোগ্যাস মালিক সমিতির মহাসচিব (প্রস্তাবিত) হাসিন পারভেজ বলেন, ‘ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মিলে এই স্টেশন করছেন। দামের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।’
এদিকে শুনানি শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন,‘আগামী সাত দিনের মধ্যে লিখিত মতামত দেওয়া যাবে। এরপর আবারও ছোট পরিসরে বসে দামের বিষয়ে মূল্যায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত দামের আদেশ দেবে কমিশন।