ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক,আসতে পারে ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ফাইল ফটো
ঢাকা(২৩ জানুয়ারি): আর্ন্তজাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ক্রমশ বাড়ছে। গত একমাসে লিটার প্রতি সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা এবং পাম অয়েল লিটার প্রতি ১৫ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন কোম্পানিভেদে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং পাম অয়েল লিটার প্রতি ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সরকার।
আগামিকাল রবিবার সকাল ১১টায় বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে এই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া দেশে ভোজ্যতেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দিতে পারেন। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এতথ্য জানান।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসেব অনুযায়ী সয়াবিনের দাম গত এক বছরের মধ্যে ১৮ থেকে ২১ শতাংশ বেড়েছে। যা গত দশবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একইভাবে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশের কিছু কম।
বাণিজ্য সচিব মো: জাফর উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বিজনেসইনসাইডারবিডি’কে বলেন, আমরা আগামিকাল সয়াবিন পামঅয়েল আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করবো। তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
এসময় ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব এখনই বলা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে কি সিদ্ধান্ত হবে তা বলা যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পেছনে দুটি কারণের কথা জানান। এর একটি হচ্ছে আন্তজার্তিক বাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অন্যটি হচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) একাধিক স্তরের হওয়া।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ভোজ্যতেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। ফলে আন্তজার্তিক বাজারের অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়লে, এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই দেশের বাজারে পড়বে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সয়াবিন ও পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে মজুত কমে এসেছে। যেকারণে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমে গেছে।
এছাড়া দেশে চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০) থেকে ভোজ্যতেলের ওপর তিন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়। আগে শুধু আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করা হতো। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম করও দিতে হয়। এই কারণে দেশে আমদানি করা ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ওই দামের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে ওই দামের ওপর নির্ভর করে ভ্যাট ও কর আদায় করলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে।
ইনডেক্স মুন্ডি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি আন্তজার্তিক বাজারে অপরিশোধিত প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ৯৩১ দশমিক ৮৯ মার্কিন ডলার। যা গত ডিসেম্বরে ছিলো ৭৯৪ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়া পাম অয়েল কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ জানুয়ারি প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম ছিল ৮১২ দশমিক ২৭ মার্কিন ডলার বা তিন হাজার ২৮৪ রিঙ্গিত। যা গত ডিসেম্বরে ছিলো ৭১৬ মার্কিন ডলার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে তিনটি সুপারিশ করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে এই তিন সুপারিশ করে। প্রথম সুপারিশ হচ্ছে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা এবং সরবরাহ ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৩ ও ৫ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা। দ্বিতীয় সুপারিশ হচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিতে অগ্রিম কর তুলে নেওয়া।
তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে,আমদানি মূল্যে শতকরা হারের পরিবর্তে প্রতি টনে নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে। কমিশন বলছে, দুই পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, অগ্রিম কর প্রত্যাহার এবং সরবরাহ ও খুচরা পর্যায়ে কমিশন যৌক্তিক করলে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১১০ টাকায় রাখা যাবে।
চলতি মাসের শুরুতে ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে একটি প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে তারা উল্লেখ করেন, আমদানি মূল্যের উপর ভ্যাট আরোপের পরিবর্তে প্রতি টনের দাম নির্দিষ্ট করে, ওই দামের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা প্রয়োজন। এতে করে ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা পড়বে না।
ট্যারিফ কমিশনের হিসেবে অনুযায়ী দেশে ভোজ্যতেলের বছরে ২০ লাখ টন। এর সিংগভাগই আমদানী করে
দেশের চারটি কোম্পানি। এগুলো টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ। এছাড়া এডিবল অয়েল কোম্পানি, ইউনাইটেড গ্রুপসহ আরো বেশকিছু কোম্পানি।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া এ প্রসঙ্গে বিজনেসইনসাইডারবিডি’কে বলেন, আন্তজার্তিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারত সম্প্রতি ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়েছে। আমাদেরও কমাতে হবে। নইলে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।