বাংলাদেশে ২০২০ সালে এলএনজি আমদানি বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৪ জানুয়ারি): বাংলাদেশে ২০২০ সালে লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেশি ছিল। পেট্রোবাংলা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানির পরিমান ছিল ৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘন মিটার। এ পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি ছিল।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৫ টি কার্গোতে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। প্রতিটি কার্গোতে প্রায় ১৩৮,০০০ ঘনমিটার এলএনজি ছিল।
এসব শিপমেন্টে স্পট মার্কেটের জন্য বরাদ্দ ছিল কেবল একটি কার্গো। বাকী ৬৪টি ছিল ডিলারদের। এ বছরও বাংলাদেশ ৬৪ এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা করেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে সুবিধাজনক দামে পাওয়া গেলে স্পট মার্কেট থেকে ২৪ এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনাও বাংলাদেশের রয়েছে।
২০১৯ সালেও, বাংলাদেশ মোট ৬৪ এলএনজি কার্গো আমদানি করেছিল।
পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন সরকার চালিত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ২০২০ সালে কাতারগাস থেকে আনুমানিক ২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করেছিল। এটি একই বছর ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওটিআই) থেকে তারা প্রায় দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করেছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে স্পট বাজার থেকে এলএনজি কার্গো সরবরাহ করেছে কেবল ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লি.।
বাংলাদেশ গ্যাস চালিত শিল্প ও কারখানাগুলিতে বিশেষত গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য এলএনজি আমদানি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে।
৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন বেশ কয়েকটি দ্বৈত জ্বালানী উৎপাদন কেন্দ্র আগে পেট্রোলে চালানো হলেও, এখন সেগুলো গ্যাসে-চালিততে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এ বছর আরও গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকার ধীরে ধীরে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এমন তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলি বন্ধ করে দিতে চাইছে। এতে ব্যয় এবং পরিবেশ উভয়ই বাঁচাতে আরও এলএনজি চালিত স্থাপনা তৈরীর সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক ভাবে এফএসআরইউ থেকে রুপান্তরিত এলএনজি সরবরাহ শুরু করে। আর স্থানীয় সামিট গ্রুপ সরবরাহ শুরু করে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে।
উভয় এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রেজিফিকেশন ইউনিট) প্রতিদিন আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) এলএনজির রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে।
বর্তমানে বাংলাদেশ কাতারগাস ও ওটিআই থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করে আসছে।
এটি ২০২১ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানি দ্বিগুন করে প্রায় ১,০০০ এমএমসিএফডি এবং তারপরে ২০২৫ সালের মধ্যে ২,০০০ মিমিসিএফডি করার কাজ করছে।
২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশ দ্রুততম বর্ধমান এলএনজি আমদানির অন্যতম বাজার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা প্রবল ভাবে বাড়ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে সার, টেক্সটাইল এবং চামড়া খাতে মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩০ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ডেনমার্ক এবং ইকিউএমএস কনসাল্টিং লিমিটেডের সহযোগিতায় কোপেনহেগেন ভিত্তিক র্যামবোলের তৈরি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সারের প্লান্টের মতো বিভিন্ন সেক্টরে বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে বার্ষিক প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করতে হবে।
দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নতুন কোন ক্ষেত্রের সন্ধান না মিললে প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বিদ্যমান মজুদ ২০৩৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয়ে যাবে।