হিসাব বিবরণীর মাত্রাতিরিক্ত ফিতে অসন্তুষ্ট গ্রাহক
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (২৫ জানুয়ারি): বিভিন্ন ব্যাংক নিয়ম-নীতির নানা ফাঁক-ফোঁকর ব্যবহার করে গ্রাহকদের হিসাব বিবরণী দেওয়ার জন্য আদায় করছে ইচ্ছে মত ফি। এসব ফি গ্রাহকরা দিতে বাধ্য হলেও, বিষয়টি নিয়ে তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
কিছু ব্যাংক হিসাব বিবরণীর জন্য এককালীন ফি আদায় করছে। আর কিছু ব্যাংক মাস ভিত্তিক হিসাব বিবরণী ফি এবং অন্যরা হিসাব বিবরণীতে কত পৃষ্ঠা রয়েছে তার ভিত্তিতে ফি আদায় করছে।
কোনও ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে একজন অ্যাকাউন্টধারীর সমস্ত লেনদেনের বিবরণ থাকে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকেই এই জাতীয় রেকর্ড রাখা হয়।
সাধারণত, বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি বছর বিনামূল্যে দুটি হিসাব বিবরণী দিয়ে থাকে। তবে যদি কোনও গ্রাহকের অতিরিক্ত বিবরণী প্রয়োজন হয়, তবে তাদেরকে এর জন্য অর্থ প্রদান করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড কোনও গ্রাহকের বছরে দুটির বেশি হিসাব বিবরণী প্রয়োজন হলে, অতিরিক্ত হিসাব বিবরণীর জন্য ৫৭৫ টাকা আদায় করে।
ব্র্যাক ব্যাংক ৫০০ টাকা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে। এবি ব্যাংক ভ্যাট সহ ৩৪৫ টাকা এবং এক্সিম ব্যাংক ২৩০ টাকা ফি হিসেবে আদায় করে থাকে।
কিছু ব্যাংক আবার মাস ভিত্তিতে ফি আদায় করে। যেমন, ব্যাংক এশিয়া এবং এনসিসি ব্যাংক প্রতি মাসের জন্য ২৫ টাকা করে এবং সাউথ ইস্ট ব্যাংক ৭৫ টাকা করে ফি আদায় করে।
আরেক পন্থায়, আইএফআইসি ব্যাংক হিসাব বিবরণী ১০ পৃষ্ঠার হলে ২৮৭ টাকা ফি রাখে। এর অতিরিক্ত পৃষ্ঠার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।
ব্যাংক থেকে এ ধরণের ডকুমেন্ট গ্রাহকদের বিনামূল্যে পাওয়া উচিত। অথচ এর জন্য মোটা অঙ্কের ফি আদায় করা নিয়ে গ্রাহকরা গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ইবিএলের গ্রাহক গৃহবধূ জেসমিন হোসেন বলেন, "আমি অন্য কারো তথ্য চাইছি না। একটি কাগজের বিবৃতিতে আমার হিসাবের বিবরণ জানার অধিকার আমার রয়েছে। এজন্য ৫৭৫ টাকা ফি দুঃখজনক।"
ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক সাফাত নাজির বলেন, একটি হিসাব বিবরণী দেওয়ার জন্য এতো বেশি অর্থ আদায় করা হাস্যকর। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত।
তবে ব্র্যাক ব্যাংকের তাদের নির্ধারিত ফি আদায়ের পিছনে যুক্তি রয়েছে।
ব্যাংকের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান একরাম কবির বলেন, “ব্র্যাক ব্যাংকে আমরা বর্তমানে পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশন করার ওপর জোর দিচ্ছি। এটা করতে গিয়ে আমরা গ্রাহকদের সব ধরণের ব্যাংকিং প্রয়োজনের জন্য তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছি।”
তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকও চাইছে প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্য কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে গ্রাহকরা শাখাগুলিতে সশরীরে না আসুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, এ ধরণের ঘটনা স্বাভাবিক। বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে তিনি বলেন, "বিভিন্ন ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দেয়। সেবার জন্য ফি আদায়ের পরিমাণও আলাদা হতে পারে। তবে আমি মনে করি, এই ফি যৌক্তিক হওয়া উচিত।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমান বলেন, যে কোনও সার্ভিস চার্জ অযৌক্তিকভাবে বেশি হওয়া উচিত নয়। আর গ্রাহকদের এ জাতীয় সমস্যার জন্য ভোগান্তির শিকার হওয়া উচিৎ নয়।