ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট: বিমানে যাত্রী কমেছে, বেড়েছে বাসে
বিশেষ প্রতিবেদন || বিজনেস ইনসাইডার
ইনফোগ্রাফ: বিজনেসইনসাইডারবিডি
ঢাকা (১৫ ফেব্রুয়ারি): মাত্র এক বছর আগেও আকাশ পথের অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনস গুলোর জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত রুট ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম। এ রুটে বিপুল সংখ্যক যাত্রীর অধিকাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী। তারা প্রায়ই ঢাকা থেকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে যাতায়াতে আকাশ পথ ব্যবহার করতেন।
করোনা মহামারী শুরুর পরও প্রথম কয়েক মাস ছাড়া আকাশ পথে ঢাকা-চট্টগ্রামে যাত্রীর সংখ্যা খুব একটা কমেনি। কিন্তু এখন এ সংখ্যা অনেকটা কমেছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মার্কেটিং সাপোর্ট ও জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বিজনেসইনসাইডারবিডি’কে জানান, এ রুটে তারা প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যাত্রী হারিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিমান সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট সংখ্যা নির্ধারিত নেই। যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকাশ পথে যাত্রী কমার পেছনে রয়েছে দুটি কারণ। ফ্লাইটের আগে এবং পরে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাস সেবার মান উন্নত হওয়া।
গ্রীনল্যান্ড ট্রেডিং হাউজের পরিচালক মোহাম্মদ সিদরাতুল ইসলাম মনে করেন, বাস ভ্রমনের চেয়ে আকাশ পথে সময় কম লাগে। কিন্তু রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকায় শাহ আমানত বিমানবন্দও থেকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সময়মত পৌঁছানো খুব কঠিন কাজ।
বন্দরনগরীতে নিয়মিত মিটিংয়ে যোগ দিতে চট্টগ্রামে আসতে হয় এমন একজন ব্যবসায়ী বলেন, ধানমন্ডি থেকে ফ্লাইট ধরতে ঢাকা এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে আমার প্রায় দুঘণ্টা সময় লাগে।
বিমানের চেয়ে বাসে ভ্রমনের বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রী তৌহিদুর রহমান বলেন, বিমানে উঠার জন্য এক ঘণ্টা আগে যাত্রীকে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হয়। নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন হয়। বিমানের চেয়ে বাসে সময় বেশি লাগলেও অর্থ এবং যাত্রার আগে পরে যে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন হয় সেটার বিবেচনায় যাত্রার আগে প্রথম পছন্দের তালিকাতে বাসই আসে।
বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমি যদি গ্রীন লাইন, সোহাগ বা শ্যামলী পরিবহনে যেতে চাই, তাহলে এক দিন বা এক ঘণ্টা আগে টিকিট বুক করলেই হয়। এক্ষেত্রে যাত্রার পরিকল্পনা বাতিল করলেও তারা আমাকে তাৎক্ষণিক টাকা ফেরত দেবে। আর এজন্য এয়ারলাইনসে সময় লাগবে প্রায় এক মাস।
তৌহিদুর আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্বল্প পরিসরের বিমানের চেয়ে পর্যাপ্ত পরিসরের বাসের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বেড়েছে।
সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার এক ম্যানেজার বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিজনেসক্লাস বাসে যাত্রীসংখ্যা সামান্য বেড়েছে। তবে গেল বছরে করোনাভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তিনি বলেন, কুয়েট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবার খুলে দিলে আমাদের যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।
নগর পরিবহন গবেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শফিক-উর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করায় এ রুটে বাসের যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে বিমানে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। কারণ বিমানে যাতায়াতের পর্যাপ্ত অর্থ এখন যাত্রীদের হাতে নেই।
তিনি বলেন, বাসে যেতে একজন যাত্রীর টিকিটের দাম পড়ে ৪৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ শ’ টাকা। অন্যদিকে বিমানে যেতে একজনকে খরচ করতে হয় দুই হাজার ৫০০ টাকার বেশি।’