বসুন্ধরা ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড স্বর্ণ পরিশোধানাগার করতে চায়
বিশেষ রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা(১৬ ফেব্রুয়ারি): দেশে বেসরকারি খাতের দুটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ পরিশোধানাগার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে। কোম্পানি দুটি হলো বসুন্ধরা গ্রুপ ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
এদিকে, দেশের জুয়েলারী শিল্প রক্ষায় স্বর্ণ নীতিমালায় পরিশোধনাগারে ২০ বছরের জন্য বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করাসহ তিনটি দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি। অন্য দুটি দাবির মধ্যে একটি হলো গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাটের পরিমাণ কমানো, অন্যটি হলো আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি কমানো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এ প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, আমরা চাই দেশের বিনিয়োগেই স্বর্ণের পরিশোধানাগার স্থাপন হোক। এজন্য আমরা সরকাররের কাছে আগামি ২০ বছর এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার দাবি জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড স্বর্ণ পরিশোধানাগার স্থাপনের অনুমতি চেয়েছে।
তিনি আরো জানান, এছাড়াও আমরা গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো এবং আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি কমানোর জন্যও সরকারকে বলেছি। তিনি জানান, স্বর্ণ নীতিমালায় এই বিষয়গুলো সংশোধন করা না হলে ডিউটি ফ্রি সুবিধায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বর্ণ আসবে। তাতে করে পুরো খাতের ওপরই একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত) নীতিমালা বলা হয়েছে, পরিশোধনাগার করার অনুমতি নিতে হলে কোম্পানির ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকতে হবে। অনুমোদন পেলে উৎপাদন শুরু আগে চলতি মূলধন থাকতে হবে ৫’শ কোটি টাকা। পরিশোধনাগার করতে হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ বিঘা জমিতে। এছাড়াও আকরিক আমদানিতে এমন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে , যে কোম্পানির মজুদ ১০০ টনের উপরে ও বার্ষিক ১০ টন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় নিতে হবে ব্যবস্থা আর তদারকি করবে কারিগরি কমিটি। উৎপাদিত স্বর্ণের বার ও কয়েনে থাকবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ সিল।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, পরিশোধনাগার অনুমোদনের ৩ বছরের পর চলতি মূলধন ও উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশের নিচে নামলে কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত করতে পারবে সরকার। পাশাপাশি পরিবেশ, আমদানি-রপ্তানি ও বার নিয়ন্ত্রণের শর্ত অমান্য হলে স্থগিত হবে লাইসেন্স।
পরিশোধানাগার স্থাপনে বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাজুস থেকে অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্বর্ণ নীতিমালার সংশোধনীতে এদেশের জুয়েলারী ব্যবসায় খুচরা, পাইকারী, উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপন্নসহ সকল ক্ষেত্রে নূন্যতম ২০ বছরের জন্য শতভাগ দেশিয় বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেয়া ও বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বাজুস থেকে ভ্যাট কমানো প্রসঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি। বেশি ভ্যাটের কারণে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকরা ভ্যাট প্রদানে ব্যাপক অনীহা প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, উচ্চবিত্তরা দেশ থেকে স্বর্ণ না কিনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে করমুক্ত সুবিধায় গহণা ক্রয় করছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের জুয়েলারী খাতে। এই অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জুয়েলারী খাতে সর্বমোট দেড় শতাংশ ভ্যাট অথবা শুধুমাত্র গহনার মজুরির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ভরি প্রতি কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।
গত ২৭ জানুয়ারি স্বর্ণ আমদানী ও পরিশোধানাগার স্থাপনের সুয়োগ রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর আগে ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা করে সরকার। এই নীতিমালার দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি ও স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়।