সোনার অলংকার বিক্রিতে ভ্যাট তিন শতাংশ করার দাবি বাজুসের
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনার অলংকার কিনতে ক্রেতাকে পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এতে এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে ক্রেতার খরচ পড়ছে লাখ টাকার ওপরে, যা সাধারণ ক্রেতার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করার প্রস্তাব জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সহসভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সংগঠনের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল প্রমুখ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুলসে সংশোধন এনেছে সরকার। সংশোধিত ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, একজন যাত্রী ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের বার বাংলাদেশে আনতে পারবেন। আগে একজন যাত্রী ২৩৪ গ্রাম ওজনের দুটি বার আনতে পারতেন।
সংশোধিত ব্যাগেজ রুলসকে যুগান্তরকারী পদক্ষেপ বলে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের বক্তারা জানান, এদেশে সোনা চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে সোনার বার বা পিণ্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করেছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ বৈধভাবে সোনা আমদানিতে উৎসাহিত করবে।
সোনার বারের মতো ব্যাগেজ রুলের আওতায় অলংকার-গহনা আনার সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করেছে বাজুস। স্থানীয় সোনাশিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করতে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশের সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। তবে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সরকারের সমীক্ষা প্রয়োজন বলে জানায় সংগঠনটি।
বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয় ও শিল্পসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্কÑএ কথা বলে বাজুস জানায়, বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ, যা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পাঁচ শতাংশ হারে উচ্চ ভ্যাট হার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ককর ও ভ্যাটহার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা দেয়া দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি করছে বাজুস।
এর মধ্যে রয়েছে সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাটহার পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা, ইডিএফ মেশিন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে না বসিয়ে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। অপরিশোধিত আকরিক সোনায় আরোপিত সিডি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে এক শতাংশ নির্ধারণ করা। আংশিক পরিশোধিত সোনার সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার পাঁচ শতাংশ করা। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের নতুন শুল্কহার নির্ধারণ। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ।
সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ককর অব্যাহতি দেয়াসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার ও সোনার কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু এডিশনসহ এর ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দাবি করেছে বাজুস।
এছাড়া অস্বাভাবিক শুল্ক হার কমিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে শুল্কহার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দেয়া ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থা সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দেশের সোনা ব্যবসায়ী সংগঠনটি।