দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে উন্নতির সুযোগ রয়েছে: পাকিস্তানের হাইকমিশনার
চট্টগ্রাম ব্যুরো || বিজনেস ইনসাইডার
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র মতবিনিময় সভায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী
চট্টগ্রাম (২৭ ফেব্রুয়ারি): বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনাময় হলেও আশানুরূপ নয়। এক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও বেশি সম্পর্কোন্নয়নের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এসএম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী, চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাবিব মহিউদ্দিন ও দূতাবাসের কমার্শিয়াল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সুলেমান খান বক্তব্য রাখেন। এ সময় দুই চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও মো. আবদুল মান্নান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্যের এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্যের একক প্রদর্শনীর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি প্রচলিত পণ্যের বাইরে নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে পাকিস্তানি কাঁচামাল ব্যবহার করে ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।
হাইকমিশনার দুই পক্ষ যাতে সমানভাবে উপকৃত হয় সে লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ মধ্য এশিয়াসহ পাকিস্তান থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে থাকে। এক্ষেত্রে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) ব্যবহার করে সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে তা সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময় ও পর্যটন প্রসারে ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট ভিসা সহজীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পাকিস্তানে গড় ট্যারিফ বাংলাদেশ থেকে কম হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কোটা ও সংখ্যার সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য ও মানগত বাধ্যবাধকতা এবং পাকিস্তান সরকারি এজেন্সির একচ্ছত্রভাবে আমদানি অন্যতম বাধা বলে তিনি মন্তব্য করেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি বলে উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর, রুলস অব অরিজিন সহজ করা এবং সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে করাচি বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সরাসরি ঢাকা-করাচি বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানান চেম্বার সভাপতি।
চেম্বার পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব সিপিইসি ব্যবহার করে কীভাবে লিড টাইম কমানোসহ ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারেন, তার ওপর একটি অনলাইন প্রেজেন্টেশনের অনুরোধ জানান।
অঞ্জন শেখর দাশ ধন্যবাদ জ্ঞাপনসূচক বক্তব্যে বলেন, ব্যবসায়ীরা আর্থিক লাভ এবং ব্যবসা করার সুযোগের ওপর নির্ভর করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চিটাগং চেম্বার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমুদ্রপথে সরাসরি তুলা, ফেব্রিক্স ইত্যাদি আমদানি করা গেলে ব্যবসা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী দুই দেশের রাষ্ট্রীয় শিপিং করপোরেশনের আওতায় স্বল্প ধারণক্ষমতার ভ্যাসেলের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি জাহাজ চালানোর অনুরোধ জানান। চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাবিব মহিউদ্দিন পাকিস্তান থেকে আমদানিকালে ইলেকট্রিক ফ্যানসহ অন্যান্য কাঁচামালের উচ্চ শুল্ক হ্রাস করার অনুরোধ জানান। দূতাবাসের কমার্শিয়াল সেক্রেটারি মুহাম্মদ সুলেমান খান করাচি চেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চিটাগং চেম্বারের প্রতি অনুরোধ জানান।