মার্চে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় পতাকা, গ্রাফিক্স: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ
ঢাকা (২৭ ফেব্রুয়ারি): চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামি ৩ ও ৪ মার্চ ভারতের নয়াদিল্লীতে এই বৈঠক হবে। চারটি বিষয়ের মধ্যে থাকছে পাট রপ্তানীতে এ্যান্টি ডাম্পিং আরোপ, বৃহৎ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিপা) ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) শর্ত সমূহ মানা উল্লেখযোগ্য।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে ২৬ মার্চেও অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। এই সফরের আগে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠকে দীর্ঘদিনে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।
বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন এই প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেন, আমাদের জন্য বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে আমরা পাট রপ্তানীতে অ্যান্টি ডাম্পিং আরোপ, সাফটার শর্ত মেনে চলা, সিপা চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই বৈঠক সফল করতে আমরা উভয়দেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি বেশ কিছু বিষয়ে আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাধানে আসতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ৫ বছর আগে ভারত হঠাৎ করেই বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। পরে গত ৫ বছরে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে একাধিবার আলোচনা হলেও কার্যত কোন ফলাফল আসেনি। উল্টো ভারতের স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম দামে পাট রপ্তানী করা হচ্ছে এমন অভিযোগে বাংলাদেশের প্রতি টন পাটে ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। এখন এই বিষয়টি নিয়ে ভারর সরকারও আলৈাচনা করতে চায়।
এছাড়া সম্প্রতি ভারতের আগ্রহে বৃহৎ অংশীদারিত্বের অর্থনৈতিক চুক্তি (সিপা) করতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন এই চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছে উভয় দেশ। এটি নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলৈাচনা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যেও ক্ষেত্রে নতুন কাস্টমস রুলস প্রয়োগ না করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে এরইেমধ্যে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। চিঠিতে সাফটাসহ যেসব আঞ্চলিক চুক্তির আওতায় ভারতে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সেগুলোর শর্ত মেনে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এবার বাণিজ্য সচিব পর্যাযের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সার্ক প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট (সাপটা), সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) ও এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা)-এর আওতায় মদ ও তামাক জাতীয় ২৫টি পণ্য বাদে সকল পণ্যে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাচ্ছে।
সাফটা চুক্তি অনুযায়ী ভারতে রফতানি করা বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইস্যু করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। পণ্য ছাড় করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কোন ভেরিফিকেশনের দরকার হলে ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইপিবির মাধ্যমে তা যাচাই করে। গত ২১ সেপ্টেম্বও থেকে কার্যকর করা ভারতের নতুন ‘কাস্টমস রুলস ২০২০’-এ ভেরিফিকেশনের ক্ষমতা দেশটির কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ সাফটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। পরে আফগানিস্তান সাফটায় যুক্ত হয়।
ওই কর্মকর্তা জানান, বৃহৎ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের চুক্তি (সিপা) নিয়ে ভারতের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। এবার এই চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছে। চলতি বছরে আরও ১১টি দেশের সঙ্গে এ ধরণের চুক্তি করা হতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে করা হবে সিপা চুক্তি।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে ভিসা জটিলতা একটি বড় সমস্যা। সহজে ভিসা প্রাপ্তি, টেস্টিং ল্যাব স্থাপন, বর্ডার হাট স্থাপন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শুল্ক ও অশুল্কজনিত সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হবে।