সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্যে, কমছে পরিবহনে
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
ঢাকা(০১ মার্চ): চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এডিপির সংশোধনীতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন খাতের বরাদ্দ কমছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাংখিত হারে এডিপির বরাদ্দ ব্যয় করা যায়নি। এর মধ্যে বৈদেশিক অংশের ব্যয় আরও কম। এজন্য বছরের মাঝপথে এসে বৈদেশিক অংশে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। তবে উন্নয়নে গতি স্বাভাবিক রাখতে নিজস্ব অর্থায়নে কোন ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত কমিটির বৈঠক এ খসড়া আরএডিপি চূড়ান্ত করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসির বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন এবং ২ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের প্রোগামিং বিভাগের প্রধান খোন্দকার আহসান হোসেন বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে খসড়া বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এনইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, হ্রাস করা অর্থ বিদেশি উৎস থেকে কেটে নেওয়া হবে এবং সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকবে।
খসড়া এডিপির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পরিবহন খাতে চলতি অর্থবছরের মূল বরাদ্দের চেয়ে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। সর্বাধিক অগ্রাধিকার খাতটি প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ৪৯ হাজার ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে, যা মূল এডিপিতে ছিল ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতেও বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
দ্বিতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ এবং আবাসন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, যা মূল বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ছে।
অন্যদিকে এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি জনসংখ্যা এবং পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বরাদ্দ পুনরায় বিতরণের পর চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার আরএপিডির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা এডিপি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বৈদেশিক সহায়তা ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এ হিসাবে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এখন সংশোধিত এডিপির জন্য এ বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় করতে না পারায় এ অর্থ ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করতে পেরেছে ১৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৭ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এছাড়া খাত হিসাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ। এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৫ হাজার ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
অন্যান্য খাতের বরাদ্দ হচ্ছে কৃষি খাতে মূল বরাদ্দ ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৫৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া পল্লী-উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ আছে ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পানিসম্পদ খাতে ৪১৬ কোটি টাকার স্থলে ৬৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার স্থলে ১১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
জ্বালানি খাতে ৭৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার স্থলে ৮৫৪ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ১৯ হাজার ৬৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকার স্থলে ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতে ১ হাজার ৩৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্থলে ৮১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ভৌত পরিকল্পনা ও পানি সরবরাহ খাতে ৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার স্থলে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার স্থলে ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। গণসংযোগ খাতে ২২ কোটি টাকার স্থলে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।