ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পছন্দের শীর্ষে সরকারি ঠিকাদার
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
গ্রাফিক্স বিজনেস ইনসাইডার বিডি
ঢাকা (১৩ মার্চ): বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় এখন শীর্ষে উঠে এসেছে সরকারের অবকাঠামো খাতের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা। ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরই পছন্দ করছে। ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এক বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি খাতের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই তাদের পক্ষ থেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চাহিদাও স্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকে প্রচুর অর্থ অলস পড়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতি ব্যাংকের লাভের ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বাস্তবতা বিবেচনা করেই ঋণদাতা হিসেবে ব্যাংক ঠিকাদারদের মাধ্যমে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে। সাধারণভাবে সরাসরি এ ধরণের প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ খুব একটা ব্যাংকের নেই।
এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন ব্যাংকের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকারের কয়েকটি মেগা প্রকল্পে এ ব্যাংক ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং আরো বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলি রেজা ইফতেখার সম্প্রতি বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেছেন, তৈরী পোশাক, টেক্সটাইল এবং ওষুধ কোম্পানির মতো প্রচলিত ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব এখন অনেক কমে গেছে। এ কারণে আমরা বিকল্প সম্ভাবনাময় গ্রাহকের সন্ধান করছি।
বেসরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ব্যাংকে অতিরিক্ত নগদ অর্থ জমে থাকার বিষয়টি তার বক্তব্যকে সমর্থন করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকে জমে থাকা অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন বেড়ে ২লাখ ৪হাজার ৭শ’ ৩৮ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ঋণ নেওয়ার হার কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে আর সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে লাভের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৪ শতাংশে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে এ মাসে ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়ায় টার্গেট ১৭ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে এটা অনেক কম। তবে এ হিসাব এ সময়ে ব্যাংকের নতুন ঋণের পরিমাণ নির্দেশ করে না। কারণ, ব্যাংক সাধারণত বছর শেষে ঋণের ওপর এর সুদের পরিমাণ হিসাব করে থাকে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা এখন খুবই নগণ্য।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, আমাদের কাছে প্রচুর নগদ অর্থ জমা পড়ে আছে। কিন্তু ঋণ নেওয়ার মতো লোক পাচ্ছি না। অথচ কল মানি মার্কেটে সুদ একেবারে তলানিতে পৌঁছে ১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে আমরা এখন সরকারের মেগা প্রকল্পের ঠিকাদারদেরকে অর্থের যোগান দিচ্ছি। এছাড়া ট্রেজারিবন্ডেও বিভিন্ন ব্যাংক এখন বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যদিও এ থেকে লাভের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এসেছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া, রূপপুর পরমানু বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট (প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প), ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, পদ্মা বহুমুখি সেতু এবং একটি রেল লাইনের মতো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও এ তালিকায় রয়েছে। দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্পও চলমান রয়েছে।