বাজেটে পোশাক খাতের প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি: বিজিএমইএ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বাজেটের শনিবার প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। বিজিএমইএ’র সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় পোশাক খাতের আরও দুই সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি কচি বলেন, ‘বাজেট বক্তব্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির (পোশাক খাত) জন্য কিছু নীতি সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।’
পোশাক শিল্প সংকটে আছে দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘পোশাকশিল্পে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে শিল্প একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ।’
বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে, যেগুলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে না বলে মনে করছে বিজিএমইএ। তার মধ্যে আছেÑ স্টিল বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহƒত বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব; অর্থনৈতিক অঞ্চলে
অবস্থিত কারখানার ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব; জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব; নতুন বন্ড লাইসেন্স ফি ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব।
এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল এবং আছে। এছাড়া ইনসেনটিভের ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, পোশাকশিল্পের ঝুটের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ইত্যাদি প্রস্তাব বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এটা আমাদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।’
কাস্টমস আইন ২০২৩ বাস্তবায়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি এই আইনের ১৭১ ধারা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
২০২৯ সাল পর্যন্ত পোশাক খাতের বিদ্যমান প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং বিকল্প প্রণোদনা চালু না করা পর্যন্ত চলমান প্রণোদনা কাটছাঁট না করা, এক্সিট পলিসি প্রবর্তন, ফুড রেশনিংয়ের জন্য বিশেষ তহবিল বরাদ্দ রাখার দাবিও জানান কচি।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি হাতেম বলেন, ‘রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) যদি দিতে হয়, তাহলে সেটি ১ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবি জানাই। এজন্য অবশ্যই রিটার্ন এবং সমন্বয়ের দরকার আছে। এটা করার জন্য সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ জানাই। নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে আমরা অবশ্যই চাপে পড়ব। তাই আমরা সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জানাচ্ছি।’
শিল্পাঞ্চলের বাইরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাংক ঋণ না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সেটি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধতা তৈরি করবে বলে মনে করেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমে গেছে। আবার প্রশাসন থেকে সবাইকে ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে বলা হয়েছে। আপনি যদি গাড়িতে তেল না দিয়ে ড্রাইভারকে চাবুক মারেনÑগাড়ি চালাও, এটা সম্ভব নয়। আমি গ্যাস সংকট সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑবিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব, বিকেএমইএ’র সহসভাপতি আক্তার হোসেন অপূর্ব, সহসভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ প্রমুখ।