বৃহস্পতিবার

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪


৪ আশ্বিন ১৪৩১,

১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা বাড়ল

বিশেষ প্রতিবেদন || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৬:৪৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২০
সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা বাড়ল

ফাইল ছবি

ঢাকা (০৭ ডিসেম্বর): বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইসের কারণে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

গত ৩ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

অতিমারি কোভিড-১৯'র কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিপরীতে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ব্যয় সংকোচনের জন্য গত ৩ ডিসেম্বর এক পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহাহিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রনালয়ের অর্থ বিভাগ।

এর আগে একই বিভাগ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় যানবাহন ক্রয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে গত ৮ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছিলো।

নতুন পরিপত্রে বলা হয়, কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতির আলোকে অর্থবিভাগের গত ৮ জুলাইয়ের পরিপত্রের ধারাবাহিকতায় সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সকল প্রকার নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে যানবাহন ক্রয় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বিআই প্রতিবেদকে বলেন , রাজস্ব আদায়ের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। অন্যদিকে করোনার কারণে ভ্যাকসিন ক্রয়সহ স্বাস্থ্য সেবা খাতে সরকারের খরচ বেড়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে সরকার।

এদিকে গত ৮ জুলাই, চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যয় না করলেই নয়, এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।

পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের ‘উচ্চ’, ‘মধ্যম’ ও ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তা হচ্ছে- মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর বা সংস্থাসমূহ উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহ যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।

মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে; মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর বা সংস্থা স্বীয় বিবেচনায় সেসব খাতে অর্থ ব্যয় করবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় পরিহার করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। এছাড়া নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে।

তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে। প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮ সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের গত অর্থবছরের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪৭ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে চলতি বছরের এ সময়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার প্রথাম চার মাসে ২০ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৭ হাজার ১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আহরণে পিছিয়ে রয়েছে ২০ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রজস্বে প্রবৃদ্ধি হয়েছে হয়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৬৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়