ঢাবিতে আলটিমেটাম, হলেই থাকছেন জাবি শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাবি ও জাবির শিক্ষার্থীরা। ছবি: বিজনেসইনসাইডারবিডি
ঢাকা (২২ ফেব্রুয়ারি): আগামি ১ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর আহবান প্রত্যাখান করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা হলেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে আগামি ১৭ মে থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল এবং ২৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা জানান।
সোমবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জোনায়েদ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা 'এক দফা এক দাবি, হল খুলবে ফেব্রুয়ারি', 'হল সব খুলতে হবে, নইলে তালা ভাংতে হবে', ভিসি স্যার টিকা দিন, হলের তালা খুলে দিন' প্রভৃতি স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দেশের সবকিছুই যখন স্বাভাবিকভাবে চলছে, তখন হল বন্ধ রাখা অযৌক্তিক।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র জুনাইদ হুসেইন খান বলেন, সেশনজট যাতে আর দীর্ঘায়িত না হয়, সেজন্য মার্চ থেকেই যেন হল খুলে দেওয়া হয়। আমরা মার্চেই হলে উঠতে চাই।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় একবছর হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল বন্ধ। টিকাও চলে এসেছে। এখন হল খুলতে বিলম্বের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ফটকের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় হলের নিরাপত্তাকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কাউকে বাধা দেননি।
প্রায় ঘণ্টাখানেক হলের ভেতরে অবস্থান শেষে দুপুর সোয়া একটা দিকে শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা দ্রুত হল খোলার দাবিতে বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন।
এদিকে, ১৭ মে থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল এবং ২৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়া দাবির একটি প্রধান কারণ হলো স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ এবং নিরাপত্তাহীনতা। প্রায় তিন মাস পরে হল খুললে এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী তাহলে কোথায় থাকবেন?’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে পূণর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন এবং নিজেদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ঝামেলা হয়েছে, তাই আমরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে হলে থাকতে চাইছি। এখানে থাকাটা আমাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। আর শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন সেটা সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বলেছেন। কিন্তু বর্তমানের জাহাঙ্গীর নগরের পরিস্থিতি ভিন্ন। একে আমলে নিতে হবে। আমাদের হল ছাড়া গতি নেই এবং এখনই খুলে দেওয়া প্রয়োজন।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে হল ত্যাগের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ৫ দাবির মধ্যে রয়েছে : হল খোলা রাখতে হবে ও শিক্ষার্থীরা হলেই থাকবেন তাদের হল থেকে বের করা যাবে না; আগামি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেরুয়ার সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে ও এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; এ ঘটনার সাথে ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারী ও কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছে কিনা তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে; অজ্ঞাত মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করতে হবে।
এর আগে দুপুর ১২টায় একই স্থান থেকে ৫ দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হল সংলগ্ন সড়ক অতিক্রম করে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে নারী শিক্ষার্থীরা ফের তালা ভেঙে হলে ঢোকেন। ওই হলে এখন প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। বিকেলে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী হল ত্যাগের অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা অনুরোধ অমান্য করে সেখানেই অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা হল থেকে বের হব না। আমরা যে আল্টিমেটাম দিয়েছি, সেটাই এখনো বহাল রয়েছে। স্থানীয় চিহ্নিত ব্যক্তিরা হামলা করলেও প্রশাসন কেন অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ, সে কারণে আমরা আর হল ত্যাগ করছি না।’