শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করে বেরোবি ভিসির বক্তব্য অনভিপ্রেত: মন্ত্রণালয়  

ঢাকা (০৪ মার্চ): শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে আক্রমন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বক্তব্যকে অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষামন্ত্রনালয় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনাব কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙিক্ষত ও দুঃখজনকই নয় নিতান্তই রুচি বিবর্জিত। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেছে। 

বেরোবি ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে-
বেগম রোকেয়া  বিশ্ববিদ্যালয়ে  বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের  জন্য অনুরোধ জানানো হয়;

ইউজিসি তাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণে তদন্ত সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করে। ইউজিসি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিধায় এ প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই এবং এ সংক্রান্ত নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সাহেবের অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 

জনাব কলিমুল্লাহ সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন যা নিতান্তই অনভিপ্রেত। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে যে সভাতে মন্ত্রীর দেরিতে উপস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন সে  সভাটি ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সকালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে সভাটির সময় পরিবর্তন করে বিকালে নেয়া হয়। ঐ একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা থাকায় এবং সে সভাটি ভিসিদের সাথে আলোচনার পূর্বে হলে ভালো হয় বিবেচিত হওয়ায় ভিসি মহোদয়দের সঙ্গে সভাটির সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকার সভাটি নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক প্রলম্বিত হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, সচিব এবং ইউজিসির চেয়ারম্যানসহ প্রতিনিধিবৃন্দের ভিসিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় যোগ দিতে দেরি হয়। শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত সকলের কাছে অনিচ্ছাকৃত এই বিলম্বের জন্য বিশেষভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর সময়ানুবর্তিতার বিষয়টি সবার কাছে সুবিদিত। তিনি সময় মতো সব সভায় অংশ নেন।   সেদিনের সবারই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিসি কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকই নয় নিতান্তই রুচি বিবর্জিত। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর একটি বাণী একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাওয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন চলছিল। সে পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী সে বাণীটি দেয়া সমীচীন মনে করেননি। এরপরে বিগত এক বছরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আর কোন বাণী চাওয়া হয়নি। 

ভিসি কলিমুল্লাহ উপরোক্ত বিষয় সমূহের বাইরেও শিক্ষা মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে রাজনীতিকে জড়িয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন যার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ভিসি কলিমুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যেসব বক্তব্য রেখেছেন সে সব বিষয়ে এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ, তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে ইউজিসি থেকে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়ে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভিসির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় ভিসি কলিমুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অন্যান্য সব বক্তব্য সম্পর্কে মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন প্রাপ্তি ও বিবেচনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় বক্তব্য উপস্থাপন করবে।