বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন
সাংস্কৃতিক ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর মেয়ে পৌলমী, ছবি : আনন্দবাজার পত্রিকা
ঢাকা (১৫ নভেম্বর): বর্ষীয়ান অভিনেতা ও আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বরেণ্য এই অভিনেতার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটলো বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়ের। মৃত্যুর আগে তিনি দীর্ঘ ৪০ দিন কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, চিকিৎসকরা জানান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন সৌমিত্র। গত ২৪ অক্টোবর রাত থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রবিবার সকালে বেলভিউ নাসিং হোমের চিকিৎসকরা বাংলা সিনেমার ফেলুদা খ্যাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
চিকিৎসকরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার পরেও শরীরে থাকা বার্ধক্যজনিত নানা রোগের সঙ্গে লড়াই করে পেরে উঠছিলেন না। ফলে দীর্ঘদিন লাইফ সাপোর্টে থাকতে হয়েছে তাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বুধবার বিকেলের পর থেকেই চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর, ব্রেনডেড হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
এর তিনদিন আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার সফলও হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকঠাক কাজ করছে। তবে তিনি খুব দুর্বল। শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচারের পর সৌমিত্রকে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছিল।
গত ৬ অক্টোবর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এরপর ১৪ অক্টোবর অভিনেতার কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু কোভিড এনসেফেলোপ্যাথির কারণে তার স্নায়ুতে প্রভাব পড়ে। এরপর থেকেই প্রায় অচেতন ছিলেন তিনি। মাঝে কয়েকদিন চোখ মেলে সাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ আবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রবিবার দুপুরে তার এই মৃত্যুর খবর দেন চিকিৎসকরা।
সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের মেয়ে পৌলমী জানিয়েছেন, দুপুরে প্রথমে গল্ফগ্রীনের বাড়তিতে নেওয়া হবে তার বাবাকে। এরপর টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্র সদনে নেওয়া হবে মরদেহ। সেখান থেকে নেওয়া হবে কেওড়াতলা শ্মশান, যেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
১৯৩৫ সালে কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ছেলেবেলা কাটে ‘ডি এল রায়ের শহর’ কৃষ্ণনগরে। মা আশালতা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন গৃহবধূ। বাবা মোহিত চট্টোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন আইনজীবী। হাইস্কুল থেকেই অভিনয় শুরু করা সৌমিত্র কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে নেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাট্যশিল্পী হিসেবেও খ্যাত ছিলেন সৌমিত্র। তার কর্মজীবন শুরু হয় আকাশবাণীতে, ঘোষক হিসেবে। পরে বাচিক শিল্পী হিসেবেও তিনি ছাপ রাখেন। তার কণ্ঠে রবীন্দ্রকবিতা বা জীবনানন্দ আচ্ছন্ন করে কবিতা রসিক বাঙালিকে। কবিতা আবৃত্তি শুধু নয়, নিজে কবিতা রচনাও করেছেন তিনি। করেছেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজ। তবে তিনি মূলত অভিনেতাই। বাঙালির অন্যতম প্রিয় নায়ক। ২০০৪ সালে ভারত সরকার তাকে 'পদ্ম ভূষণ' পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১২ সালে পান 'দাদাসাহেব ফালকে' পুরস্কার। এসব ছাড়াও ভারতে এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এ অভিনেতা।