উন্নয়নের প্রশংসা করায় বিতর্কে রিয়াজ, দিলেন কড়া জবাব
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: রিয়াজের ফেসবুক থেকে
ঢাকা (২৭ জানুয়ারি): দেশে কিংবা বিদেশে নির্বাচনী প্রচারনায় তারকাদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশেও প্রিয় প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে বহুবার তারকাদের মাঠে দেখা গেছে। সম্প্রতি চলমান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে সমর্থন দিতে অন্য অনেক তারকার সাথে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদও।
সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভ রাস্তা দিয়ে আসার সময় নিজের দেশে এমন রাস্তা দেখে মুগ্ধ হন রিয়াজ এবং প্রচারণার একসময় চট্টগ্রামের উন্নয়ন তুলে ধরতে গিয়ে রাস্তাটিকে বাংলাদেশের নয়, ইউরোপের কোন রাস্তা বলে বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্য গণমাধ্যম ও কিছু নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
রিয়াজের দাবি, তাঁর এই বক্তব্যকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু অনলাইন পোর্টাল তির্যকভাবে উপস্থাপন করেছেন। যে কারণে অশালীন ও অসভ্য ভাষায় আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। তবে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এর কড়া জবাবও দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সন্ধ্যায় এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে রিয়াজ লিখেছেন, ‘গত রবিবার আমি আমার কিছু সতীর্থ তারকাদের সাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ভাইয়ের নির্বাচনি প্রচারণাতে অংশ নিতে যাই। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আসার সময় মনে হয়, এ তো বাংলাদেশের নয়; ইউরোপের কোনো রাস্তা। অত্যন্ত হর্ষ ও গর্ববোধ করি এ নিয়ে। এরপর সারা দিন ধরে চলে উৎসবমুখর এবং স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনি প্রচারণা। আর সব সময়ের মতোই চট্টগ্রামের মানুষের অতিথেয়তায় মুগ্ধ হই। চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয় অনেক বড় ও তাঁরা মানুষকে অনেক সম্মান করেন। সারা দিনের প্রচারণা শেষে ঢাকা এসে আমি ক্লান্ত হয়ে দুই দিন বিশ্রাম নিই। বিশ্রাম শেষে ফেসবুক তথা সামাজিক গণমাধ্যমে এসে দেখি তুঘলকি কাণ্ড!
রিয়াজ আরো লিখেছেন, আমি নাকি বলেছি, আমার কাছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পুরো রাস্তাটাই ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে। ভুঁইফোড় অনলাইন মিডিয়াগুলোর প্রধান কাজই মানুষের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কিছু ক্লিক কামানো, এটাই তাদের রুজিরুটি। প্রথমত আমি প্রশ্ন করতে চাই, আমার এই বক্তব্যের ভিডিও সবখানে আছে, আমাকে দেখাতে পারবেন সেই ভিডিওতে আমি কোথায় বলেছি যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পুরো রাস্তাটাই ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে? আমি একটি নির্বাচনি প্রচারণার মাঝখানে ছিলাম, প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলাম, একটি উৎসবমুখর পরিবেশের উত্তেজনাতে ছিলাম। সেখানে একটি ঝটিকা স্পট ইন্টারভিউতে তো আমার এত ডিটেইলস বলা সম্ভব নয় যে এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মূল শহরে আমি চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ রোড করে আসি এবং সেই রাস্তাটিকে আমার উন্নত বিশ্বের রাস্তার মতোই মনে হয়। আপনাদের এই ধরনের কাজে আমি আসলেই হতবাক। আমার কিছুই বলার নেই।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় একটি বিশেষ মহল। তারা আমার নিউজটিকে নিয়ে শুরু করে অশালীন এবং অসভ্য ভাষার আক্রমণ। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটিকে ভাইরালও করে। অন্য কোনো সময় হলে কিংবা অন্য কেউ হলে আমার আসলেই হয়তো অনেক রাগ উঠত, কিন্তু আমার এই মুহূর্তে খুব হাসি পাচ্ছে। হাসি পাচ্ছে কারণ, যাঁরা এই অশ্লীল আক্রমণগুলো করছেন, তাঁদের সিংহভাগই হলো সেই কুচক্রী মহলের লোক, যাঁরা নাকি একজন রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পান।
রিয়াজ দেশের নেটিজেনদের কাছে প্রশ্ন রেখে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে কি আপনারা এখনো এতই ফেলনা মনে করেন? আপনাদের কি মনে হয় বাংলাদেশে আসলেই এমন কোনো সড়ক কিংবা স্থাপনা নেই, যা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে? নিজ দেশের প্রতি আপনাদের কি এতটুকুও আস্থা নেই? আপনাদের দেশপ্রেম কি এতই নড়বড়ে, যে কিছু কুচক্রী গুজববাজের কথা শুনে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন? না ভাই, বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। সেই দিন অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার বেগে ধাবমান।’
ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি লিখে বেশ কিছু ছবি দিয়েছেন রিয়াজ আহমেদ। ছবিগুলো দেখে সাধারণ মানুষকে বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই নায়ক লিখেছেন, ‘আপনারা নিজেরাই বিচার করুন যে আমরা আসলেই এগিয়েছি কি না। বাংলাদেশে আসলেই উন্নত বিশ্বের সমতুল্য স্থাপনা আছে কি না। আমি অনুরোধ করছি যে এসব গুজবকারীর কথায় কান দেবেন না। এরা দেশের শত্রু, এরা আপনার শত্রু।’
ওই নির্বাচনি প্রচারণায় রিয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, সায়মন সাদিক, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, বিজরী বরকতউল্লাহ, সুইটিসহ অনেকে।