বিদায় নিলেন অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেত্রী ক্লোরিস লিচম্যান
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৮ জানুয়ারি): অস্কার এবং আটবার এমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হলিউড অভিনেত্রী ক্লোরিস লিচম্যান আর নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার এনকিনিটাসে মঙ্গলবার বয়সজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। মৃত্যুর সময় মেয়ে দিনাহ এংলুন্ড তার পাশে ছিলেন।
অভিনেত্রীর দীর্ঘদিনের ম্যানেজার জুলিয়েট গ্রিন তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন। গ্রিন বলেন, “আমাদের সময়ের অন্যতম নির্ভীক অভিনেত্রী ছিলেন ক্লোরিস লিচম্যান। তাঁর সঙ্গে কাজ করা সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ক্লোরিসের মতো আর কেউ ছিল না। একদৃষ্টিতে তিনি যে কারও হৃদয়ে দাগ ফেলে দিতে পারতেন, আর যতক্ষণ না চোখের পানি আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি হাসাতেন। তিনি যে কি বলবেন তা কখনও আন্দাজ করা যেত না। তাঁর মধ্যে সেই অপ্রত্যাশিত গুণটি ছিল।”
টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য মেরি টাইলার মুর শো’-তে ফিলিস লিন্ড্রস্টম চরিত্রের জন্য বিখ্য়াত ছিলেন ক্লোরিস। শোটিতে লিচম্যানের চরিত্র ‘ফিলিস’ অনেকটা তাঁর নিজের মতো ছিল বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এই চরিত্রটি তাঁকে ২টি এমি অ্যাওয়ার্ড এনে দেয়। লিচম্যান তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন। লিচম্যান আরও অনেক চরিত্রের জন্য পুরস্কার জিতেছিলেন। তার মধ্যে একটি হল পিটার বোগদানোভিচের ‘দ্য লাস্ট পিকচার শো’। ১৯৭১ সালে এই ছবিতে গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার পেয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি ছবিটির সিক্যুয়েল ‘টেক্সাসভিল’-এও অভিনয় করেন। কিন্তু এটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। দুটি ছবিই ল্যারি ম্যাকমুর্টির লেখার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।
প্রয়াত এ কিংবদন্তী সাত দশকের বেশি সময়ের কর্মজীবনে ৮টি প্রাইমটাইম এমি, একটি ডেটাইম এমি পুরস্কার, একটি একাডেমি পুরস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও একটি বাফটা পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১২বার মনোনীত হওয়া এই অভিনেত্রী ‘ডে টাইম এমি’ জয় করেন ১৯৭২ সালে। ১৯৯৮ সালের ‘প্রমিসড ল্যান্ড’য়ে অভিনয়ের জন্য একবার এবং ‘ম্যালকম ইন দি মিডল’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে ২০০২ ও ২০০৬ সালে দুবার এমি জয় করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি মিস শিকাগো হিসেবে ২০তম মিস আমেরিকা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং শীর্ষ ১৬ প্রতিযোগীর মধ্যে ছিলেন। ৮২ বছর বয়সে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্সিং উইথ দি স্টার্স’য়ে অংশ নেন তিন। এছাড়া ২০১৯ সালে পুনরায় নির্মিত কমেডি ধারাবাহিক ‘ম্যাড অ্যাবাউট ইউ’তে অভিনয় করেন ক্লোরিস। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে তিনি ফক্স চ্যানেলের সিটকম রাইজিং হোপ-এ ম ম চরিত্রে এবং ২০১৭ সাল থেকে তিনি আমেরিকান গডস-এ জোরইয়া ভেচেরনায়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
২০১০ সালে এই বয়সেও ব্যস্ত থাকার রহস্য কী? নিউ ইয়র্ক টাইমস’য়ের এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, “ব্যস্ত’ শব্দটা আমি পছন্দ করি না। কারণ আমি সেভাবে জীবন চালাই না। কাজ আমাকে আনন্দ ও উত্তেজনা দেয়, সতেজ রাখে। তাই কাজকে কাজ হিসেবে ভাবি না।”
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের ডে মোয়েন’য়ে বেড়ে ওঠা ক্লোরিস নিউ ইয়র্কের ‘অ্যাক্টরস স্টুডিও’তে মার্কিন পরিচালক এলিয়া কাজানের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। যেখানে তার সহপাঠী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো।
পরিচালক প্রযোজক রবার্ট ইংলান্ডের সঙ্গে ক্লোরিস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫৩ সালে। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৭৯ সালে। পাঁচ সন্তানের জননী এই অভিনেত্রী এরপর আর বিয়ে করেননি।