থমকে আছে কনসার্ট শিল্পীদের আয় রোজগার
সাকিবুল এজাজ || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ
ঢাকা (২৫ মার্চ): করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে এক বছর প্রায় স্থবির ছিলো পুরো বিশ্ব। পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞায় এখনো বন্ধ রয়েছে সব ধরণের জনসমাগম। খোলা জায়গায় বন্ধ রয়েছে সঙ্গীতের আসর, গানের কনসার্ট। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে কনসার্টে জড়িত থাকা শিল্পীসহ অন্যদের আয়-রোজগার। কারণ, বিভিন্ন ব্যান্ড ও একক শিল্পীদের রোজগারের একটা বড় অংশই আসে কনসার্টে গান গেয়ে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বজুড়ে কনসার্টের একই অবস্থা। এ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে কনসার্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও (বাংলাদেশি ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা) বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। লাইভ-এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি পাবলিকেশন ‘পোলস্টার’-এর বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিলো, ২০২০ সালে বক্স-অফিস রেকর্ড ১২.২ বিলিয়ন ডলার আয় করবে। কিন্তু করোনার প্রভাবে গত বছর মার্চ মাস থেকে কনসার্ট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উল্টো ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইন্ড্রাস্ট্রি। যার মধ্যে শুধু বক্স-অফিসেই ক্ষতি হয়েছে ৯.৭ বিলিয়ন ডলার।
বছরের শুরু এবং শেষের দিকের সময়কে বলা হয় কনসার্টের মৌসুম। বিশেষ করে শীতের সময় শিল্পীরা লাইভ কনসার্টের জন্য ব্যস্ত থাকেন বেশি। তবে, গত বছর মার্চের পর থেকে করোনার কারনে আউটডোরে (উন্মুক্ত মঞ্চ) কনসার্টের অনুমতি মেলেনি এখনো। এ বছর বাতিল করা হয়েছে জয় বাংলা কনসার্টের মতো বড় বাৎসরিক অনুষ্ঠানও। তাই বার্ষিক আয়ের জন্য কনসার্টের ওপর নির্ভরশীল শিল্পীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাও এবার বেশ চিন্তিত।
বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডদল অ্যাশেজ, যারা করোনার আগের দুই বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কনসার্টে গান করেছেন। তাদেরও এই সময়ে ব্যস্ততা একদমই নেই। অন্যান্য ব্যান্ড ও শিল্পীদের মতো তাদের আয়েও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও কী-বোর্ডিস্ট আদনান বিন জামান।
তিনি বলেন, “একটা কনসার্ট শুধুমাত্র শিল্পীদের দিয়ে আয়োজিত হয় না। এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে সাউন্ড কোম্পানি, ফাউন্ডেশন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ অনেকেই। কনসার্ট বন্ধ থাকায় এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সবাই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের দেশে অন্যান্য শিল্প সেক্টরগুলোকে যেরকম গুরুত্ব দেয়া হয়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে ততোটা দেওয়া হয় না। এখনো এই শিল্পকে বিনোদনের অংশ হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়। ফলে সরকারের কেউ কনসার্ট উন্মুক্ত ভাবে আয়োজন বা ক্ষতিগ্রস্থদের প্রণোদনার জন্য বলে না।”
বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতি ও মাইলস ব্যান্ডের সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, “করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমরা কোনো কনসার্ট করছি না। এটাও ঠিক যে, ওপেন এয়ার কনসার্ট হলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে, অথচ অন্যসব ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়ম মেনেই সব কার্যক্রম চলছে। কিছু ব্যান্ড আর শিল্পী ছোট পরিসরে ইনডোর কনসার্টে পারফর্ম করছে। কিন্তু বেশীরভাগ শিল্পীই, বিশেষ করে যন্ত্রশিল্পীরা কষ্টে আছে। কনসার্ট না হলে এই শিল্পের মানুষ জীবিকার তাগিদে অন্যমুখী হয়ে পড়বে।”
বামবা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ লোকদের সঙ্গে আলোচনা করছে বলেও জানান তিনি। খুব শীঘ্রই ভালো সংবাদ দিতে পারবেন বলেও তিনি আশাবাদী।
জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী দিলশাদ নাহার কনা বলেন, “বছরের শুরুতে ছোট পরিসরে কিছু ইনডোর ও কর্পোরেট শো করেছি। যদিও অডিও গান নিয়ে সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু একজন শিল্পীর আয়ের কথা যদি বলতে হয় তবে, কনসার্টই হচ্ছে বড় মাধ্যম। আর কনসার্টের মধ্যে দিয়েই দর্শকদের খুব কাছে যাওয়া সম্ভব হয়।”
সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা যায়, অনেক শিল্পীই এখন কনসার্টে গান গাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কনসার্ট আয়োজন করা হোক, এটিই তাদের চাওয়া। তাছাড়া, দর্শকরাও কনসার্ট উপভোগ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন বলেও তারা মনে করেন।