নাট্যজন আলী যাকের আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ফাইল ফটো
ঢাকা (২৭ নভেম্বর): একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা নাট্যজন আলী যাকের আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে তার বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর জানান, আলী যাকেরের মরদেহ শুক্রবার বেলা ১১টায় নিয়ে যাওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে। সেখানে একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জানান। জুমার পর বনানী কবরস্থানে আলী যাকেরকে দাফন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বনানী কবরস্থান মসজিদেই হবে তার জানাজা।
ক্যানসারে আক্রান্ত এই অভিনেতা করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সপ্তাহ দুই আগে। রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে গত রোববার বাসায়ও ফিরে গিয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে সেখানেই মারা যান তিনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, শেষ দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল আলী যাকেরের। সে কারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জন্য শেষ শ্রদ্ধার আয়োজন রাখা হয়নি।
আলী যাকেরকে গত ১৮ নভেম্বর নগরীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৪ বছর ধরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক পাস করে নটরডেমে ভর্তি হন। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। এরপর সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। অনার্স পড়াকালেই ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অনার্স শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে চলে যান করাচি। সেখানেই প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ফিরেন তিনি।
১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। একই বছরের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। এই দলের হয়ে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ো রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি। যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।
দর্শকের ভালোবাসা যেমন কুড়িয়েছেন নন্দিত এই শিল্পী, তেমনি প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে অসংখ্য পুরস্কার। এ তালিকায় রয়েছে, একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক প্রভৃতি।
প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর শোক: আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
শুক্রবার এক শোকবার্তায় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই নাট্যজনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলী যাকের ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, নির্দেশক, কলামিস্ট, নাট্য সংগঠক ও স্বনামধন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার। তিনি ছিলেন টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে সমান জনপ্রিয়। বিভিন্ন টিভি নাটকে তার অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে। এ শক্তিমান অভিনেতার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি তার অভিনয় ও সৃজনশীল কর্মের মধ্য দিয়ে এদেশের অগণিত দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।