করোনাভাইরাসের টিকার পাঁচ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিআই ডেস্ক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১২ ডিসেম্বর): করোনভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিহত করতে বাংলাদেশে অচিরেই আসছে এর টিকা। এ বছর এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বেশ তড়িঘড়ি করেই টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ টিকা মানুষের মঝে পরীক্ষা করা হলেও পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশংকা রয়েই যাচ্ছে।
কোন প্রতিষেধক বা টিকারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়। আবিষ্কারের শুরুতে নতুন টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা বেশি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা কমে আসে। কিন্তু করোনাভাইরাসের এ টিকার ক্ষেত্রে সেই সময়টাই দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই ডাক্তার এবং ওষুধ কোম্পানিগুলো সতর্ক করে বলেছে করোনাভাইরাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেহাৎ কম হবে না।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যারা বিভিন্ন কোম্পানির করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানাচ্ছেন। কিন্তু কোটি কোটি মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে এ ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নেয়ার ছাড়া কোন উপায় নেই। তবে এ সম্পর্কে আমাদের সবার জানা থাকা উচিৎ।
করোনাভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে মানুষের মাঝে ভয় কাজ করলেও সেটা বড় ধরণের কোন চিন্তার বিষয় নয়। কেননা, এ টিকা নেয়ার পর বড় ধরণের কোন ঝুঁকি থাকলে টিকা অনুমোদনই পেত না। এখন পর্যন্ত এর যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানা গেছে সেগুলো হচ্ছে:
০১. জ্বর ও শরীর ঠাণ্ডা হওয়া: মর্ডানার ট্রায়ালে অংশ নেয়া এক স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন টিকা নেয়ার পর তিনি হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা অনুভব করেছেন এবং তার জ্বরের মাত্রা ছিল ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। তবে তিনি স্বীকার করেছেন কয়েক ঘণ্টা পর এসব উপসর্গ এমনিতেই চলে গেছে। এর জন্য আলাদা কোন ওষুধের দরকার হয়নি।
এখানে উল্লেখ্য জ্বর এবং তীব্র ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া মর্ডানার টিকার খুবই সাধারণ দুটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে এর ব্যথার তীব্রতা একজনের থেকে অন্য জনের পার্থক্য থাকতে পারে।
০২. মাথা ব্যথা: এ টিকার আরেকটি সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে মাথা ব্যথা। এ টিকা নেয়ার পরপরই মাথা ব্যথা বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়া, মানষিক চাপ, বিরক্তি ভাব, ঘুম ঘুম ভাবসহ নানা ধরণের উপসর্গও টিকা নেয়ার পর দেখা দিতে পারে। পরিসংখ্যাণে দেখা গেছে যেকোন টিকা নেয়ার পরই ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে হালকা বা মৃদু মাথা ব্যথাসহ এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে।
০৩. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া: এ টিকা নেয়ার কারণে গ্যাস্ট্রোইনস্টেটিনাল সিস্টেমে প্রভাব ফেলতে পারে। মে মাসে মর্ডানার ট্রায়ালে অংশগ্রহনকারী সর্বোচ্চ ডোজ নেয়া এক স্বেচ্ছাসেবী টিকা নেয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত বমি বমি ভাব অনুভব এবং বমি করার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি ঘুমঘুম ভাব অনুভূত হওয়া এবং পাকস্থলিতে খিঁচুনি অনুভূত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। এসব উপসর্গের পর তিনি দুর্বল অনুভব করেছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
০৪. মাংস পেশীতে ব্যথা: শরীরের যেখানে টিকা দেয়া হয় সেখানকার মাংস পেশি এবং আশপাশের ত্বকের বেশ ব্যথা অনুভুত হতে পারে। এটাও বেশ সাধারণ একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। টিকা দেয়ার পর ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, র্যাশ ওঠাও ব্যক্তি বিশেষের ইমিউন সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে। এখন পর্যন্ত ফাইজার, মর্ডানা এবং অক্সফোর্ডের টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাংস পেশিতে ব্যথার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
০৫. মাইগ্রেন: টিকার ট্রায়ালে অংশগ্রহনকারী স্বেচ্চাসেবীরা এখন পর্যন্ত তীব্র যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন সেটা হলে মাথার এক পাশে ব্যথা বা মাইগ্রেন। ফাইজারের ট্রায়ালে অংশ নেয়া এক স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন টিকা নেয়ার পর তিনি সাংঘাতিক মাত্রায় মাইগ্রেনে ভুগেছেন। টিকা নেয়ার পর তিনি এ কারণে একদিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যাদের এমনিতেই মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে এ টিকা নেয়ার পর সেটা আরো বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপসর্গ হিসেবে খুব কমন না হলেও মাইগ্রেনের সমস্যার কথা জানার পর বিষয়টি সম্পর্কে সবার জানানো উচিৎ। টিকা নেয়ার পর মাইগ্রেনের মাত্রা হালকা বা সাধারণ হবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সূত্র: ইনডিয়া টাইমস