যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে ‘ধ্রুবতারা’: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিটিভির সৌজন্যে
ঢাকা (২৭ ডিসেম্বর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমান বহরে যুক্ত হওয়া নতুন বিমান ধ্রুবতারা আমাদের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন ১ম ড্যাশ ৮-৪০০ ‘ধ্রুবতারা’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একই অনুষ্ঠানে তিনি ১৯টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, ছয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঢাকার কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রিয় কারাগার ও একটি এলপিজি স্টেশন উদ্ভোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এয়ারলাইন বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা নিয়ে যায়। কোন দেশে যখন আমাদের প্লেন নামে সেটা যে বাংলাদেশ সেটাই চিহ্নিত হয়। স্বাধীনতার পরপর ‘বিমান’ নামকরণ জাতির পিতাই করেছিলেন। এর লোগো থেকে সব কিছুই আমাদের স্বনামধন্য শিল্পীদের নিয়ে তিনি তৈরী করে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো বিমান কিনেছি। যেটা আমরা নিয়েছি সেটা সবচেয়ে আধুনিক এবং উন্নত মানের। আজ যে বিমান উদ্বোধন হচ্ছে সেটা আমাদের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সব দিক থেকে লাভবান হতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা বিমানেরই আমি বাংলাদেশের প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন নতুন নাম দিয়েছি। ইতোমধ্যেই পালকি, অরুন আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খী, আকাশ বীনা, হংস বলাকা, গাংচিল, রাজহংস, অচিন পাখি, সোনার তরী বিমানগুলোর নাম দিয়েছি। আজ যেটা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সেটার নাম ধ্রুবতারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্রুবতারা আমাদের দিক নির্দেশনা দেয়। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী পালন করছি ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি। এসবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমি ধ্রুবতারা নামটি আমি পছন্দ করেছি। এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমার ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ করে বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের একটাই এতোগুলো বিমান কিনে যখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যোগাযোগ করবো তখন করোনাভাইরাস এসে আমাদের সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়ে গেল। এতো চমৎকার উড়োজাহাজগুলো কিনলাম, কিন্তু করোনাভাইরাসের ফলে সারা বিশ্বের সঙ্গে আজ বলতে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সারা বিশ্বেই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। জানি না এর থেকে কবে মুক্তি আসবে। করোনায় সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে আছে।
এই অবস্থার মধ্যে ধ্রুবতারাকে দেশে নিয়ে আসা এবং এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটিকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান এবং ড্যাশ ৮-৪০০ ধ্রুবতারার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ।
সশরীরে ‘ধ্রুবতারা’ উদ্বোধন করতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খুব দুঃখ লাগছে ওখানে যেতে পারছি না। সবার সঙ্গে ছবি তুলতে পারছি না। আশা করছি করোনা ভাইরাসের এ সমস্যা দূর হবে। আবার সবাই মিলিত হতে পারবো।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, ড্যাশ ৮ এর আরো দুটো বিমান ফেব্রুয়ারিতে আনা হচ্ছে।
এরপর তিনি কেরানাীগঞ্জে নির্মত মহিলাদের জন্য তৈরী নতুন কারাগার উদ্বোধন করেন। তিনি এ সময় বলেন, এ কারাগারটি যথেষ্ট উন্নত মানের করা হয়েছে। তিনি বলেন আমরা কারাগারে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। কারাবন্দীদের কোন নির্দিষ্ট পোশাক ছিল না, ট্রেনিং ছিল না। তাদের নিরাপত্তারও কোন ব্যবস্থা ছিল না। এমন কি তাদের থাকারও ভাল ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে এসব ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে। করাগারে যারা গ্রেপ্তার হয়ে যায় তাদের সেখানে বেকার বসিয়ে না রেখে ট্রেনিং করিয়ে, পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে সঙ্গে ওইসব পণ্য বাজারজাত কারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ থেকে আয় করা ৫০ ভাগ উৎপাদনকারী হিসেবে কারাবন্দি পাবেন। এটা সে ইচ্ছে করলে জমাও করতে পারবে বা এর কিছু অংশ তার পরিবারকেও পাঠতেও পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন নাজিমুদ্দিন রোডের কারগারটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা কারাগারগুলাকেও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে বিচারকাজও ভার্চুয়াল করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মামলার রায় ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন উদ্বোধন করার আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন লাগার ফলে আমাদের দেশের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন। আমাদের সব এলাকা বা উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নাই। প্রতিটা উপজেলায় একটা করে ফায়ার স্টেশন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই ৪৬৫টা করা হয়ে গেছে। আজ ১৯টি চালু করা হবে। কাজ চলছে আরো ৬৭টি স্টেশনের। প্রধানমন্ত্রী বলেন এর বাইরেও কিছু কিছু বড় বড় উপজেলা বা ইউনিয়ন রয়েছে বা কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে সেসব এলাকার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাসপোর্ট অফিস উদ্বোধনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা বলেন, ৬টা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নতুন হয়েছে। আমরা আরো পাসপোর্ট অফিস করবো। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জ প্রান্ত থেকে দেশের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মওলানা মো. মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, সুরক্ষা বিভাগের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকবৃন্দ। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনাালয়ের সিনিয়র সচিব, বিমান পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচলক ও সিইও, স্থানীয় সদস্যসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে কেনা ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজের মধ্যে ১ম টি হচ্ছে ‘ধ্রুবতারা’। কানাডার প্রখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত, চুয়াত্তর আসন বিশিষ্ট ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজটি পরিবেশবান্ধব এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ। নতুন উড়োজাহাজটি সংযোচিত হওয়ায় বিমান বহরে বিদ্যমান মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৯টি। এগুলোর মধ্যে ৪টি বোয়িং৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮, ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯, ৬টি বোয়িং ৭৩৭ এবং ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ।