পরিস্থিতি ভালো না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও বাড়বে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিটিভি থেকে নেয়া
ঢাকা (৩১ ডিসেম্বর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনার কারণে আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি ভালো না হলে এ ছুটি আরও বাড়ানো হবে। বৃহস্পতিবার পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বই বিতরণ উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি এই করোনা ভাইরাসের কারণে সব স্কুল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। কারণ স্কুল ছাড়া সারাক্ষণ ঘরে বসেটা থাকা যে কত কষ্টকর। এটা সত্যি খুবই দুঃখের। তারপরও আমরা ‘আমার ঘর আমার স্কুল’ নামে উদ্যোগ নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে এখন ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম স্কুল খোলার, তখনই আবার নতুন করে করনোভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা এলো। এ প্রেক্ষিতে ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি ভালো হলে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। ভাল না হলে খোলা হবে না। তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষর্থীদের যে মানষিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেটা মোকাবেলায়ও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সে ব্যাপারে করনীয় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না। তাই আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছি আমরা।’
করোনার কারণে সবকিছু স্থবির জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে বই ছাপানো এবং বিতরণ করা অনেক কঠিন কাজ, দুরহ কাজ। সেই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আমি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাই। তবে স্বাস্থ্যবিধি, এক সঙ্গে যেন বেশি মানুষ সমাগম না হয় সেটা লক্ষ্য রেখে ভাগে ভাগে বইগুলো বিতরণ করতে হবে।’
এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র মিলনায়তনে কয়েকজন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনদিন করে মোট বারো দিন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পয়লা জানুয়ারি বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই পাচ্ছে। এবার ছাপা হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের পেছনের মলাটে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সর্বমোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১, তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৪টি বই। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এ বছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।
২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’ হয়ে আসছে। গত এক দশকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে।