হতাশ না হয়ে নিজের দেশে কাজ করেন: প্রবাসীদের প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিটিভির সৌজন্যে
ঢাকা (৬ জানুয়ারি): করোনাবাইরাসের কারণে দেশে ফেরা প্রবাসীদের হতাশ না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আপনারা ঋণ নিয়ে দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন। হতাশ না হয়ে নিজের দেশে কাজ করেন।
বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক ও সিআইপি ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করেন। বৈধ চ্যানেলে দেশে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর জন্য সিআইপি ক্রেস্ট পান অনিবাসী বাংলাদেশি মাহতাবুর রহমান ও জেসমিন আক্তার। দেশের শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগকারী হিসেবে সদন পান অনিবাসী বাংলাদেশি কল্লোল আহমদ।
প্রধানমন্ত্রী করোনার কারণে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের বলেন, ‘আপনারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন। হতাশ না হয়ে নিজেরা নিজের দেশে কাজ করেন। আপনারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রনালয়, কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ অন্যান্য স্থান থেকে ঋণ নিয়ে নিজেরা কাজ করুন। হতাশ না হয়ে পূর্ণ উদ্যোমে নিজের দেশে কাজ করেন। আমাদের বিভিন্ন মেগাপ্রজেক্টে আপনারা কাজ করতে পারেন। অনেকেই কাজ করছেন। এভাবে সবাই নিজের নিরাপত্তা এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলছি। আমাদের এখানে কাজের কোন অভাব হবে না। আমাদেরও দক্ষকর্মী প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। তাদেরকে আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। এর ফলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে। সেজন্য তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লিবিয়ায় সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের দেশে এখন কাজেরও অভাব নেই। খাবারেরও অভাব নেই। এখন আর দয়া করে বিদেশের সোনার হরিণ ধরার পেছনে ছুটবেন না। আপনারা নিবন্ধন করে তার মাধ্যমে বিদেশ যান। কারো প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পরবেন না। প্রবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।
শ্রমিক অভিবাসনের সঙ্গে জড়িতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অনুরোধ করে বলেন, ’এদেশের মানুষ কিন্তু মানুষ। সেভাবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে। তাদের যেন কোন রকম সমস্যা না হয়। যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের কর্মসংস্থান ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিক আছে কি না, বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টা সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে যারা কর্মরত বা বিদেশে কর্মী প্রেরণের যেসব সংগঠন আছে তাদেরকে আমি এটুকু অনুরোধ করবো আপনাদেরকে দায়িত্বশীলতার ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ দায়িত্বটা আপনাদের ওপর বর্তায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ণে বা অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। ‘প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান সরকার কাজ করছে। পাশপাশি দেশের ভেতরও কর্মসংস্থানের ব্যাংক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। যারা বিদেশে যাবেন তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যাতে দেশের বাইরে গিয়ে তাদের কোন বিপদে পড়তে না হয়। এ লক্ষ্যে আমরা বিশেষ ভাবে পদক্ষেপ দিয়েছি এবং ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। ফিরে আসা প্রবাসীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী মন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছে কারণ যারা বিদেশে যাবেন তারা যাতে কোন ধরনের ধোকা বা প্রতারণার শিকার না হন। তিনি বলেন কল্যাণ ফান্ডের অর্থ জনগণের কল্যানেই আমরা ব্যয় করছি। প্রবাসী কল্যাণ ফান্ডের কিছু টাকা এবং সরকারের পক্ষ থেকে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তৈরী করে দিয়েছি। এ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা সেখানে যাচ্ছেন সেখানকার বেতনসহ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে পারবেন এবং এখান থেকে তারা খুব অল্প সুদে ঋণ নিতে পারবেন। ব্যাংকে টাকা পাঠিয়েই তারা এ ঋণ শোধ করতে পারবেন। জমিজমা বিক্রি বা বন্ধক দিতে হবে না। তিনি বলেন যারা বিদেশ যেতে চান তারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য আমরা সব জায়গায় যেমন প্রণোদনা দিচ্ছি তেমনি এ বিশেষ ব্যাংকের জন্যও আমরা আলাদা ৫০০ কোটি টাকা রেখেছি। ২০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। এর বাইরে এই ৫০০ কোটি টাকাসহ ৭০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রবাসে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের আর্থিক সাহয্য দেয়া হয়েছে। বিশেষ বিমান পাঠিয়ে অনেক প্রবাসীকে ফেরত আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এসে যেসব প্রবাসী সমস্যায় আছেন, তাদের বলবো আপনারা প্রবাসী ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। নিজের পায়ে দাড়াতে পারেন। দেশেও এখন আমরা অনেক কাজের সুযোগ করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের অভিবাসী দিবসের প্রতিবাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান।’ খুব চমৎকার একটি প্রতিবাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাই আমার কথা। বিদেশ যখন যাবেন, কোন কাজে যাচ্ছেন সেটা নির্ধারণ করতে হবে। তার ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর এই দক্ষতা অর্জনের জন্য আমরা কিন্তু যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং সেন্টার করে দিচ্ছি। সবাই যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে যান তাহলে অর্থ বেশি উপার্জণ করতে পারবেন এবং নিজেদের চাকরির নিরাপত্তারও নিশ্চিত হবে।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নতুন করে ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যাতে নিজের এলাকায় বসেই প্রশিক্ষণ নিয়ে বাইরে যেতে পারেন।’