জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ভেঙে হলে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা
জাবি প্রতিনিধি || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: শিক্ষার্থীরা ফজিলাতুন্নেসা হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন।
জাহাঙ্গীরনগর (২০ ফেব্রুয়ারি): জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তালা ভেঙে আবাসিক হলে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে তারা আল-বেরুণী হল এবং ফজিলাতুন্নেসা হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এর আগে সকাল থেকেই হল খোলাসহ তিন দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করছিলেন।
শিক্ষার্থীরা এরপর তালা ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, শেখ হাসিনা হল, জাহানারা ইমাম হল, প্রীতিলতা হলসহ বিভিন্ন হলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। একে একে সব হলেই তারা ঢুকে পড়েছেন।
শনিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবিতে কাম্পাসে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতের হামলায় কমপক্ষে ৪০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের তিন দাবির রয়েছে- শুক্রবার রাতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার। গেরুয়া এলাকার সঙ্গে ক্যাম্পাসের সংযোগ এলাকায় স্থায়ীভাবে দেয়াল তুলে দেওয়া এবং হল বিশ্ববিদ্যালয় হল খুলে দেওয়া।
এসব দাবি নিয়ে সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুপুর ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
সেখানে বিক্ষোভ শেষে তারা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, 'সরকার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা সম্ভব না।'
এর পর শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলের তালা ভেঙে হলে ওঠার সিদ্ধান্ত নেয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথমে আল-বেরুণী এবং ফজিলাতুন্নেসা হলের তালা ভাঙে। এরপর একের পর এক সব হলের তালা ভেঙে তারা ভেতরে ঢোকেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এর মধ্যে গেরুয়া এলাকায় থাকছেন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে থাকা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এখন হল খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
গেরুয়া এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত আটটার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১১ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের ঝামেলা হয়। ওই ঝামেলা মিটমাট করার জন্য শুক্রবার বিকেলে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আলোচনা চলাকালে আবার কথা-কাটাকাটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে গেরুয়া বাজারের একটি ভবনে আটকে রাখা হয়। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে মারধর করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য এলেক্সসহ তিনজন আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাতটি মোটরবাইকও স্থানীয়রা ভাঙচুর করে।