অমর একুশে গ্রন্থমেলার কর্মযজ্ঞ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল নিমার্নৈর কাজের ব্যস্ত শ্রমিকরা, বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ
ঢাকা(০৫ মার্চ): অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে স্টল নিমার্ণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বইমেলাকে ঘিরে সাজছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বাঁশ, পেরেকে ও হাতুড়ির ঠকঠকে বইয়ের স্টলের অবয়ব দাঁড় করাচ্ছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বিভিন্ন ধরনের কর্মব্যস্ততায় উভয় প্রাঙ্গণেই আগত উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্র্দী উদ্যান মিলে এবার মোট ৮ লাখ বর্গফুট এলাকায় বইমেলার আয়োজন হবে।
মহামারী করেনাভাইরাসের সারাবিশ্বের মতো দেশেও প্রায় সব ধরনের মেলা আযোজন বন্ধ ছিলো। বাংলা একাডেমির আবেদনের প্রেক্ষিতে এবারই অমর একুশে গ্রন্থমেলা করতে সম্মতি দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালির প্রাণের এই মেলা প্রতিবারের চেয়ে এবার অনেকটাই ভিন্ন। কারণ এবারই প্রথম নির্দিষ্ট সময়ে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে এবার আগের চেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ।
ব্গিত তিন যুগেরও বেশি সময় ধওে প্রথা অনুযায়ী ভাষা মাস ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির এই প্রাণের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু চলমান করোনা মহামারীর কারণে ৩৬ বছর পর এই প্রথম প্রথাভঙ্গ হলো।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ মেলা প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করতে এবারের মেলার জায়গার পরিমাণ এক লাখ বর্গফুট বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া মেলার স্টলের ভাড়ার পরিমাণ অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য তিনি পথ রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, মেলায় যারা আসবেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করতে হবে।
গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা জানান, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১ এ মোট ৫ শ প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এরইমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্টল বরাদ্দ করা হয়ে গেছে। প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চলবে।
কর্মকর্তারা জানান, এবার মেলার স্টল ভাড়া রাখা হয়েছে ৬৬০০ টাকা। আর ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ হাজার ৫৯০ টাকা। যা আগে ছিলো ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া প্যাভিলিয়নের ভাড়াও আকারভেদে অর্ধেক রাখা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানান, গেল বছরের নভেম্বর থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ফেব্রƒয়ারিতে মেলার করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে মহামারী বিবেচনায় রেখে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
পরে ভার্চুয়ালি বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি থেকে আপত্তি তোলা হয়। সৃজনশীল প্রকাশকরা প্রতি বছরের ন্যায় বইমেলা করার দাবি জানান। এই প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি বলেছিলেন, দেরিতে হলেও বইমেলা হবে আগের মতোই।
এরপর ২০ ফেব্রƒয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ এই তিন তারিখের যেকানো দিন থেকে বইমেলা শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ১৮ মার্চ মেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, মেলার জন্য সময়টা উপযুক্ত না হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা তা মেনে নিয়েই মেলায় অংশ নিচ্ছি। তবে মেলার আয়োবজকদের ওই সময়ের আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ওই সময়টা বৃষ্টি-বাদলার সময়।