দুর্যোগে মৃত্যুতে আর্থিক সহায়তা যথেষ্ট নয়: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক:‘তাপপ্রবাহ’ দুর্যোগ হিসেবে পরিগণিত করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে হতাহতের জন্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা যথেষ্ট নয়। এটি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে’ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মহিববুর রহমান বলেন, এবারে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে। অতিমাত্রায় গরমের কারণে যারা কর্মহীন হয়েছেন, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হিট অফিসার নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই। তীব্র তাপপ্রবাহে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পানি ছিটানোর উদ্যোগ অসম্পূর্ণ। জলকামানে পানি ছিটানো যথেষ্ট নয়, এটি আরও সায়েন্টিফিক ওয়েতে করতে হবে। বিল্ডিং কোড না মেনে অপ্রয়োজনীয় কাচের ব্যবহার ভবনে অতি তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও আইন না মেনে মনমতো ঘরবাড়ি তৈরি করে নিজের ঘরকে নিজেই মৃত্যুফাঁদে পরিণত করছে। তাই আইন মানার জন্য প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান কিরণ বলেন, চলতি বছর হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সঠিক কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারেও তেমন কোনো তথ্য নেই। বর্তমান বাস্তবতায় দুর্যোগজনিত কারণে মারা যাওয়া অসহায় ব্যক্তিদের পরিবারকে অন্তত তিন লাখ টাকা দেয়া উচিত। প্রতিবছর অতি তাপমাত্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়। অতিমাত্রার গরমের কারণে ২০৩০ সাল নাগাদ শুধু পোশাক খাতে ছয় বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা আশা করব চলতি বছর আর কোনো উচ্চমাত্রার তাপপ্রবাহ তৈরি হলে সরকার তার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবে এবং অতিমাত্রার দাবদাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে।
কিরণ আরও বলেন, বড় বড় শহরে কোথাও খেলার মাঠ নেই, পার্ক নেই, প্রাকৃতিক পানির প্রবাহ নেই, পর্যাপ্ত গাছপালা নেই, বিশুদ্ধ বাতাস নেই। আছে শুধু যানজট, ঘনবসতি, অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, যত্রতত্র দোকানপাট, পার্কিং সমস্যা, ফুটপাত দখলসহ অনিয়মের আখড়া, যা দাবদাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আবার আমরা যদি শহরের বাইরের দিকে তাকাই সেখানেও সামাজিক বনায়ন নেই, জলাশয় নেই এবং খাল দখল, নদী দখল চলছে। ফলে গ্রামেও এখন প্রকৃতির যে স্নিগ্ধতা-মুগ্ধতা তা আগের মতো নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক কারণে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর খামখেয়ালিপনা, হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও চীনের নদীগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে মেরে ফেলাসহ নানা বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশ অতিমাত্রায় দাবদাহসহ বন্যা ও খরায় পর্যবসিত হচ্ছে।
‘অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণই দায়ী’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ, সাংবাদিক ফাল্গ–নী রশীদ, সাংবাদিক দিপক কুমার আচার্য, সাংবাদিক আতিকুর রহমান প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেয়া হয়।