জাপানি দুই শিশুকে বাবা-মায়ের দেখার অধিকার নিয়ে আদেশ ২২ জুলাই
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাপানি মায়ের কাছে জাপানে থাকা শিশু জেসমিন মালিকা ও বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকা শিশু লাইলা লিনাকে কোন ব্যবস্থাপনায়, কোন দেশে বাবা-মা দেখার অধিকার পাবেন- এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২২ জুলাই দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আদালতে মায়ের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, এডভোকেট আহসানুল করিম ও এডভোকেট শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
গত ১০ জুলাই বড় কন্যা সন্তান জেসমিন মালিকাকে জাপানে রেখে বাংলাদেশে ফিরে আসেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। গত বুধবার দুপুরে নাকানো এরিকো বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। নাকোনো এরিকো বলেন, আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে এসেছি।
গত ৯ মে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে মা নাকানো এরিকোর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননা মামলার শুনানি ও হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের আপিল শুনানির জন্য ১১ জুলাই দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
সেদিন আদালত বলেছিলেন, মামলার উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আমরা ওই দিন জাপানি শিশুদের নিয়ে আপিল মামলা নিষ্পত্তি করবো।
বড় কন্যা সন্তান জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে যাওয়ার ঘটনায় জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন ইমরান শরীফ। এছাড়া জাপানি ৩ শিশুকে বাবা-মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন উভয়পক্ষ।
বড় কন্যা সন্তান জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে যান জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। গত ৯ এপ্রিল বিকেল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যান। জাপানি শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ এমন অভিযোগ করেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা (বড়) ও তার ছোট বোন সোনিয়া তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে। মেজ মেয়ে লাইলা লিনা বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। তবে ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন।
ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সেদিন বলেছিলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তারপরও বড় সন্তানকে নিয়ে নাকানো এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা (বড়) ও তার ছোট বোন সোনিয়া তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে। মেজ মেয়ে লাইলা লিনা বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। রায়ে বলা হয়, প্রথম ও তৃতীয় মেয়েকে নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো বাংলাদেশে বা যে কোনো দেশে বসবাস করতে পারবেন। তবে বাবা সন্তানদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবেন। একইভাবে দ্বিতীয় মেয়ে লাইলা লিনা বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন। জাপানি মা দ্বিতীয় মেয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। বিষয়টিতে আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেদিন বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুই মেয়েকে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবার কাছে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দুই মেয়ের হেফাজত নিয়ে বাবার করা রিভিশনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এমন অভিমত দিয়েছেন বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
৩১ পৃষ্ঠায় দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।