ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (৩ ডিসেম্বর): তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যেই বিএনপি অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করতে চায়। আর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন, তাদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্য করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী হিসেবে মাস্ক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমরা অনুমতি না পাওয়ার কারণে বহু সমাবেশ করতে পারিনি, সেজন্য আমাদেরকে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই বলবৎ যে নিয়মে সভা-সমাবেশের জন্য অনুমতি নেবার কথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যখন আবার মনে করিয়ে দিল, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব এ নিয়ে কথা বলছেন। আসলে তারা বিনা অনুমতিতে গত কিছুদিন ধরে হঠাৎ করে সমাবেশ আয়োজন করছিল। আর আমরা দেখেছি, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে হঠাৎ চোরাগোপ্তা মিছিল বের করে গাড়ি ভাংচুর করা। অনুমতি নিয়ে তো সেটা করতে একটু অসুবিধা হয়।’
দেশে ভাস্কর্য নিয়ে অহেতুক একটি বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উপমহাদেশে ইংরেজরা আসার পর কেউ কেউ ইংরেজি শিক্ষা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিল, টেলিভিশন চালু হলে তা দেখা হারাম এবং হজে যাওয়ার জন্য ছবি তোলাও হারাম বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ফতোয়া দেয়া হলো যে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা সবাই কাফের। সেই ধারাবাহিকতাতেই তাদেরই প্রেতাত্মারাই কিন্তু আজকে ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
সমগ্র বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসলামী দেশগুলোসহ সারাবিশ্বে এমনকি সৌদি আরবেও মানুষের অবয়বসহ নানা ভাস্কর্য রয়েছে। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে যেখানে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আয়াতুল্লাহ খোমেনীরও ভাস্কর্য আছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশেও অনেক আগে থেকে বহু নেতা, কবি, সাহিত্যিকের ভাস্কর্য আছে। তখন কেউ কিছু বলেন নাই। হঠাৎ করে এই প্রশ্ন আনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত কারণ যারা এই প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করছেন তাদের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতা, তাদের দলগুলো আবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। সুতরাং তারা যখন বক্তব্য দেয়, তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই বক্তব্য দেয়।’
ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, এর অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘যারা এতোদির ধরে স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে লালন করেছে, পোষণ করেছে, স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে রাজনীতি করে, তারাই এটার পিছনে ইন্ধন দিচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
সর্বসাধারণের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটিকে ৫০ হাজার মাস্ক দেবার জন্য অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ ও সিডনী আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রায় ৬শত কর্মী-সমর্থক, মন্ত্রিসভার সদস্য, পার্লামেন্ট সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তারা সবাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বহুজন আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে। কারণ রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত। রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের সেবার জন্য, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মাস্ক প্রদানকারী দু’টি সংগঠন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাউসুল আজম শাহজাদা এবং সিডনী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজাদকে সাথে নিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদের হাতে মাস্ক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।