৩৯টি হাই-টেক পার্কে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: ইউএনবি
ঢাকা (৯ ডিসেম্বর): রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, সরকার দেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে। এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত দেশের সর্ববৃহৎ আইসিটি বিষয়ক মেলা ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর ইউএনবি।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মাল্টি পারপাস হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তায় বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে বর্তমান সরকার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, মেহনতি জনতা, বাংলার মাটি ও মানুষকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একই সাথে সংযুক্ত করতে পেরেছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস, অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে।
করোনা মহামারি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যে দূরদর্শী অঙ্গীকার করেছিল তারই সুফল আজ মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনা-বেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলি মেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা এ কঠিন সময়ে জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। অফিস-আদালতে চালুকৃত ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। এতে করে সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানো সহজ হয়েছে। ‘করোনা ট্রেসার বিডি’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও গুজব ও অসত্য তথ্য রোধে দেশব্যাপী ‘সত্যমিথ্যা যাচাই আগে ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী।
রাষ্ট্রপতি আরও জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগে হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার সারা দেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে। এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ কমে আসলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের কারণে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়মিত গবেষণা ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আরও মনোযোগী হতে হবে।
আবদুল হামিদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা এখন আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে আইটি খাতের রপ্তানি ২৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে যে ২০২৪ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।