বিজয় দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: বিজনেস ইনসাইডার
ঢাকা (১৬ ডিসেম্বর): বাঙালির জাতির বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের বিজয় দিবস। বিজয়ের এই দিনে সারাদেশের আপাময়জনতা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন লাখো শহীদকে।
একে একে ৪৯ বছর পাড় করে সুবর্ণজয়ন্তীর সামনে দাঁড়নো বাংলাদেশকে যেন সুবর্ণ সময়ও ডাকছে। যে পাকিস্তানের দুঃশাসনে বাংলাদেশ ছিল নিপীড়িত, অবহেলিত, নির্যাতিত। সেই পাকিস্তানকেই উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে আজ ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে সোনার বাংলা। পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুন (বাংলাদেশের জিডিপি ৩১৮ বিলিয়ন ডলার আর পাকিস্তানের জিডিপি ২৭০ বিলিয়ন ডলার) জিডিপি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ।
বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় বিজয়ের উৎসব। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে বিজয়ের উৎসব বড় পরিসরে উদযাপনের কথা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বরং অন্যান্য সব সরকারি অনুষ্ঠানের মতো বিজয় উৎসবও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালিত হচ্ছে সীমিত পরিসরে।
বিজয় দিবসের সবচেয়ে আকর্ষনীয় আয়োজন জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে সশস্ত্রবাহিনীর জাতীয় কুচকাওয়াজ এবার অনুষ্ঠিত হয়নি। রীতি অনুযায়ী সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধেও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সশরীরে যাননি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাদের পক্ষে সামরিক সচিবদ্বয় সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজন জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজন জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় শহীদদের সালাম জানায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ও সংদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং তিন বাহিনীর প্রধান শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের সন্তানরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গন খুলে দেয়া হলে বিধি নিষেধ সত্ত্বেও সেখানে নেমে আসে জনস্রোত। জনতার শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধের বেদীমূল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ভীড়ও বাড়তে থাকে। সকাল সোয়া নটার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেলা ১১ টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিশ্বদ্যিালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি, রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি বেসরকারি ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও সীমিত আকারে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, নানা চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিকে সরকার প্রতিষ্ঠিত। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এ ধারাকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। তাহলেই দেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়। রাষ্ট্রপতি দেশে বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে করোনাভাইরাস মহামারিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে মুক্তযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন। একই ভাবে তিনি করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।