ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে: রাষ্ট্রদূত মিলার
নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (১৭ জানুয়ারি): বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের অধীনেও বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত এ কথা জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক কেবল দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। আমি এই মুহূর্তে কোনো বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।' তিনি বলেন, নতুন প্রশাসনের নীতিগুলো কী তা দেখতে হবে। মন্ত্রিপরিষদের পদগুলোতে যারা যাবেন তাদের অনেকেই তার সুপরিচিত। 'তাদের অনেকেরই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে প্রকৃত মনোযোগ রয়েছে,' বলে মিলার জানান ।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) এগিয়ে নেবেন কিনা জানতে চাইলে এক সময়ে ইউএস মেরিন কর্পস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমারও তাই মনে হয়। এটি যেভাবেই বলা হোক বা যেভাবেই রিব্রান্ড করা হোক না কেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ খুব দৃঢ় থাকবে।'
মিলার বলেন, 'আমি আইপিএসকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিরোধী হিসেবে দেখছি না। আইপিএস হলো মার্কিন যুক্তিবাদ যে এ অঞ্চলটি সুশাসনের নীতি দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত।' তিনি আরও বলেন, কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো অবশ্যই লাভবান হতে পারে। কারণ এখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা এজন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দিকে নজর রাখবেন।
মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি: রাষ্ট্রদূত বলেন, সকল রোহিঙ্গা 'নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং স্বেচ্ছায়' যাতে নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই পরিস্থিতি তৈরির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আগামী ১৯ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীন কারণ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকে এই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছে ঢাকা। ত্রিপক্ষীয় এ প্রক্রিয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সঙ্কট সমাধানে যে কোনো দেশ সহায়তা করতে পারে এবং এটি কার্যকর।
জেনেভা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও সোচ্চার দেখতে চায় উল্লেখ করে মিলার বলেন, 'চাপটা মিয়ানমারের উপর থাকতে হবে। এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশ বহন করবে এটি ন্যায়সঙ্গত নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এমন অনেক দাতা আছেন যারা এগিয়ে এসেছেন। অন্যরাও আমাদের সাথে যোগ দেবে আশা করি।'
জনগণের সাথে জনগণের বন্ধন: রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাইডেন প্রশাসনের অধীনেও এটি অব্যাহত থাকবে।
মিলার বলেন, এই বছরটি সবার জন্য অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগের। কারণ বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে অসাধারণ এই দেশটি। রাষ্ট্রদূত জানান, গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের অসাধারণ যাত্রার প্রশংসা করার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাষ্ট্রদূত মিলার তরুণদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার উপর জোর দেন এবং বলেন যে স্মরণ এবং উদযাপনের এই সময়ে এটি হবে তাদের দুর্দান্ত সুযোগগুলোর মধ্যে একটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের মতো এতো কর্মচাঞ্চল্য এবং ভবিষ্যতের জন্য উৎসাহ তিনি কখনো কোনো দেশে দেখেননি।
মিলার বলেন, 'বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসের সুপারস্টার।' তিনি বলেন, বিশ্ব বাংলাদেশের মতো দেশের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছে, কেবলমাত্র এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বা অবস্থানের জন্য নয়, এখানে যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার জন্য। 'বাংলাদেশে এখন কী ঘটছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে সেটিও চিত্তাকর্ষক বলে উল্লেখ করেন মিলার।